মৌসুম শুরুর আগেই কৃত্রিম সংকটে বাড়ছে সারের দাম, দুশ্চিন্তায় মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিরা

১১ ঘন্টা আগে
আলু উৎপাদনের অন্যতম শীর্ষ জেলা মুন্সীগঞ্জে মৌসুম শুরুর আগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে। এতে চাষাবাদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা।

মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামসিং গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক। তিন একর জমিতে আলু চাষ করেন। বিগত মৌসুমে আলুর দরপতনে বড় ধরনের ক্ষতি গুনলেও এবার নতুন আশায় জমি প্রস্তুত করছেন। তবে সারের দাম যেন তার জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা। তিনি বলেন, ‘৫০ কেজির প্রতি বস্তা টিএসপি সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সাড়ে ১৩ শ’ টাকা হলেও বাজারে সাড়ে ১৮ শ’ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

 

আব্দুল মালেকের মতো জেলার হাজারো কৃষকই এখন একই সমস্যায় পড়েছেন। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার কিনে আলু চাষ শুরু করতে হচ্ছে তাদের। এতে আশঙ্কা করা হচ্ছে, আসন্ন মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, যা আলুর বাজার মূল্যেও প্রভাব ফেলবে।

 

ধলাগাঁও বাজারের সার বিক্রেতা সিরাজুল ইসলাম। তবে তার দোকানে সাটানো সাইনবোর্ডে দেখা যায়, প্রকৃত সার ডিলার আলমগীর হোসেন, যিনি দীর্ঘ ৫-৭ বছর ধরে জাপানে অবস্থান করছেন। ফলে কার্যত পুরো ব্যাবসা পরিচালনা করছেন সিরাজুলই। প্রথমে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেছেন তিনি। সিরাজুল বলেন, ‘ডিলারের কাছ থেকে বেশি দরে কিনতে হচ্ছে, তাই ৫০ কেজির প্রতি বস্তায় ৫শ’ টাকা বেশি নিচ্ছি।’

 

আরও পাড়ুন: তিন দেশ থেকে ১৮৪৭ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার

 

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হবে। এতে মোট ৯৭ হাজার ৫৬৬ মেট্রিক টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়বে।

 

প্রায় সোয়া ২শ’ কোটি টাকার এই সারের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। তবে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠে সারের কোনো ঘাটতি নেই। মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘সেপ্টেম্বর মাসে সব সার ডিলাররা উত্তোলন করেছেন। অক্টোবরের বরাদ্দও দেয়া হচ্ছে। তাই সংকটের কোনো কারণ নেই। কেউ যদি সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

 

জেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, মুন্সীগঞ্জে বর্তমানে ৭৮ জন বিসিআইসি, ১৫৭ জন বিএডিসি ডিলার এবং প্রায় ৩০০ জন সাব-ডিলার সার বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে আলু চাষে সারের চাহিদা রয়েছে- ইউরিয়া: ২৮ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন, টিএসপি: ১৫ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন, ডিএপি: ২৮ হাজার ১৬৫ মেট্রিক টন ও এমওপি: ২৫ হাজার ২৮৪ মেট্রিক টন।

 

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত কেজি প্রতি সারে খুচরা দাম- ইউরিয়া: ২৭ টাকা, টিএসপি: ২৭ টাকা, ডিএপি: ২১ টাকা ও এমওপি: ২০ টাকা কেজি। তবে কৃষকদের অভিযোগ, বাস্তবে বাজারে এসব দাম কার্যকর নয়। স্থানীয় বাজারগুলোতে টিএসপি ৩৫-৩৭ টাকা, ইউরিয়া ৩০-৩২ টাকা, ডিএপি ২৭ টাকা এবং এমওপি ২৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বস্তা হিসেবে টিএসপি সাড়ে ১৮শ’, ইউরিয়া ১৪শ’, এমওপি ১১শ’ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন