মৌলভীবাজারে মাল্টা চাষে রাজু আহমদের সফলতা

১ দিন আগে
মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ গ্রামের কৃষি উদ্যোগক্তা রাজু আহমদ।

এক সময় তার ফসলি জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ করতেন। তবে এ চাষে তিনি তেমন একটা লাভবান হতে পারছিলেন না। কৃষি বিভাগের সহায়তা ও একক প্রচেষ্টায় মৌসুমি ফল মাল্টা চাষবাদ করে এরইমধ্যে তিনি ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। গেলো বছরে এ মাল্টা ফল বিক্রি থেকে কয়েক লাখ টাকা তার আয় হয়েছে। চাষি রাজু আহমদের দেখাদেখিতে অনেকেই এখন মাল্টা চাষে এগিয়ে আসছেন। 


কৃষি বিভাগ বলছে, এ দক্ষিণ ভাগ গ্রামেই প্রায় পনেরো থেকে বিশ জন চাষি মাল্টা চাষে জড়িত রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই আর্থিকভাবে সফল।


সরেজমিন দক্ষিণ ভাগ গ্রামের মাল্টা চাষি রাজু আহমদের বাগানে গেলে দেখা যায়, সমতল আর টিলার ভাঁজে ভাঁজে সারি সারি মৌসুমিফল মাল্টার বাগান। চোখ জোড়ানো গাছগুলো বিস্তৃত এলাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি গাছের গাঢ় সবুজ পাতার ফাঁক ফোঁকর গলিয়ে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে মাল্টা। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণভাগ গ্রামের কৃষি উদোগক্তা রাজু আহমদের একক প্রচেষ্টা আর বড়লেখা কৃষি বিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে- এ মাল্টা বাগান। 

আরও পড়ুন: দেশি সবুজ মাল্টা কতটা উপকারী?

রাজু আহমদ জানান, তিনি এককালে শীতকালীন সবজি চাষ করতেন।  তার একশো শতক এ জমির সবজি চাষে দীর্ঘদিন থেকে তিনি তেমন একটা লাভবান হতে পারছিলেন না। ২০২১ সালের দিকে বড়লেখা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তিনি বারি-১ জাতের ৭০০ মাল্টার চারা লাগান তার জমিতে। তবে চারা ও সার বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও জমি প্রস্তুত করাসহ অন্যভাবে তার ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। পরের বছর তার বাগান জুড়ে ফুলে-ফলে ভরে ওঠে। তবে কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী, গাছের সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় নিয়ে গাছের ফুল ফলসহ বাগানের সবকটি গাছ ছাঁটাই করে দেন। ২০২৩ সালে এসে ব্যাপকভাবে ফলন দেখা দেয়। এ বছর পূর্বের খরচা বাদে প্রায় ৫ লাখ টাকা তার আয় হয়। 


রাজু জানান, চলতি বছর আবহাওয়া চাষের অনুকূলে থাকায় বাগানজুড়ে মাল্টার ভালো ফলন হয়েছে। প্রতিটি গাছে ব্যাপক আকারে ফল এসেছে। তবে সাম্প্রতিক ঢলের পানি তার বাগানে ঢুকে পড়ায়, গাছের বেশকিছু ফল ঝরে পড়ে যায়। এতে তিনি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হন। তারপরও উৎপাদন মৌসুমের শুরুতে চলতি বছর তিনি এ পর্যন্ত দেড় হাজার কেজি মাল্টা ভালো দামে বিক্রি করছেন। আরও অন্তত কম করে হলেও ২ হাজার কেজি মাল্টা গাছে রয়েছে। চাষির দাবি ক্ষতির পরও মাল্টা বিক্রি থেকে এবছর তিনি গেলো বছরের চেয়ে আরও ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা আয় করবেন। প্রতিদিন তার বাগান থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে মাল্টা বিক্রি করছেন। 


তিনি আরও জানালেন, গ্রামের লোকজনেরাই তার সুস্বাদু রসালো মাল্টা কিনে নিচ্ছেন। শুধু যে রাজু আহমদ এ মাল্টা চাষে জড়িত- তা কিন্তু নয়। তার এ সফলতায় আশপাশ গ্রামের অনেক চাষি এখন মাল্টা চাষে এগিয়ে আসছে। বড়লেখা ও পাশের উপজেলা জুড়ী মিলে একাধিক চাষি মাল্টা চাষ করছেন। 

আরও পড়ুন: মাল্টা চাষে সফল কুড়িগ্রামের ফারুক

বড়লেখা উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা মো. মনোয়ার হোসেন জানান, এ অঞ্চলের পাহাড় টিলার মাটি রসালো ফল মাল্টা চাষের উপযোগী। এতে বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে মাল্টা চাষে এ জেলায় নিরব বিপ্লব ঘটেছে। 


জেলা কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, এ জেলার অন্ততপক্ষে ১৭ হাজার ৭ শো চাষি এ ফল চাষাবাদের সাথে জড়িত। কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় ২০১৪-১৫ সালে কয়েক উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি বাগানের মাধ্যমে এ মাল্টা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে এ জেলায় ৫০০টি ছোট বড় মাল্টা বাগান গড়ে উঠছে। 


জেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্য মতে, এ বছর জেলায় ৫০০টি বাগানে ১৪৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষাবাদ হলেও-উৎপাদন হয়েছে ৮৭৬ মেট্রিক টন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন