মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানিয়েছেন, বাঁধ পুনর্নির্মাণে ভূমি মন্ত্রণালয় জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্নের জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
মনু নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলা রক্ষা প্রকল্পের- আওতায় ১৩টি প্যাকেজের মাধ্যমে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ পুনর্নির্মাণ। এতে শহরের বাম ও ডান তীর মিলে প্রায় ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
এ জমির সাড়ে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে পোস্ট অফিস সম্মুখ থেকে পশ্চিম বাজার এসআর প্ল্যাজার পেছন পর্যন্ত ৮০০ মিটারসহ ২ কিলোমিটার জুড়ে নতুন করে সিট পাইল দ্বারা ফ্ল্যাড ওয়াল নির্মাণ। সেই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের শাহ বন্দর থেকে নতুন ব্রিজ পর্যন্ত বাকি সাড়ে ৪ কিলোমিটার নদীর উভয় তীরে বাঁধ প্রসস্থকরণ, বাঁধ-পুনর্নির্মাণ এবং বাঁধে ব্লক স্থাপন কাজ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪৪ কোটি টাকা।
দু'বছর মেয়াদি ২০২৩ সালে এ কাজের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে আজ থেকে তিন বছর আগে অর্থাৎ ২০২১ সালের দিকে দশটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হয়। একই সঙ্গে সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধের প্রায় ৩৫ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন জানায়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে দীর্ঘদিনেও এ জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কাজ এগোয়নি। এতে মনু নদী শহর এলাকায় বন্যার হাত থেকে রক্ষা প্রকল্পকাজ সম্পূর্ণভাবেই আটকে আছে। এরইমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় দফা কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয় ২ বছর ১০ মাস পর চলতি বছরের ২২ অক্টোবর শুধুমাত্র জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। এতে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম একেবারে কচ্ছপ গতিতে এগুচ্ছে। অপরদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই কাজ নিয়ে বসে আছে। শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ অকার্যকর ও নানাভাবে দুর্বল হওয়াতে চলতি বছরের মতো আগামী বর্ষায় বন্যার আশঙ্কা করছেন শহরবাসী। সরেজমিনে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ এলাকায় গেলে কথা হয় একাধিক পৌর নাগরিকদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: বিএসএফের বাধা /তিন বছরেও মেরামত হয়নি মনু নদীর বাঁধ, বন্যা আতঙ্কে স্থানীয়রা
এম সাইফুর রহমান সড়কে (পূর্বের সেন্ট্রাল রোড) বসবাসকারি রাজনগর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রজত কান্তি গো স্বামী জানালেন, চলতি বছর বর্ষায় পুরো শহরের লোকজন নিঘুর্ম রাত কাটিয়েছেন বাঁধ ভাঙার আশংকায়। শহরের ৮০০ মিটার গাইড ওয়াল একেবারে দুর্বল হয়ে গেছে। নদীতে পানি বাড়লে গাইড ওয়াল দিয়ে পানি ছুঁয়ে শহরে প্রবেশ করছে। একইভাবে শহরের উজানে বাসুদেবশ্রী গ্রামে গেলে গ্রামের তাপস কুমার পালসহ একাধিক লোকজন দ্রুততার সঙ্গে বাঁধ মেরামতের দাবি জানালেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, জমি অধিগ্রহণ ছাড়াও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় আরও ২১ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা বাঁধের ডান ও বাম তীরে বাঁধ পুননির্মাণ এবং ফ্ল্যাড ওয়াল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এম রহমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহানুর রহমান জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ দশটি প্রতিষ্ঠান জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় পড়ে তারা তিন বছর ধরে বসে আছেন। কাজ করতে পারছেন না।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানালেন, মন্ত্রণালয় জমি অধিগ্রহণের জন্য অনুমোদন দিয়েছে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছে। বাকি অনুমতি পাওয়া গেলে কাজ হবে। ৯৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মনু নদী মূল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ৭ হাজার কোটি টাকার জানমাল ও সম্পদ রক্ষা পাবে।