গত ৪ জুলাই ভোর থেকে শুরু হওয়া লাগাতার ভারী বর্ষণ বুধবার (৯ জুলাই) পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে সৃষ্টি করেছে জলাবদ্ধতা। মৌসুমি বৃষ্টির শুরু থেকেই প্রায় প্রতিদিন দুইবার করে পানি উঠে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।
অপরদিকে, বঙ্গোপসাগরও প্রচণ্ড উত্তাল হয়ে উঠেছে। উপকূলে ঢেউ আছড়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। এ অবস্থায় আবহাওয়া অফিস মোংলা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।
টানা বৃষ্টিতে মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় মৎস্য অফিস জানায়, গত কয়েকদিনে ৩-৪ শত হেক্টর জমির ৬৪০টি চিংড়ি ঘের পানিতে ডুবে গেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চিংড়ি চাষের ওপর নির্ভরশীল এ উপজেলার বহু মৎস্য চাষি এখন চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে ইতিমধ্যে সরকারি সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
শহরের তাহেরের মোড়, শেলাবুনিয়া স্কুল রোড, পুরাতন বাজার, পুরানো থানার সামনের রাস্তা, বিএলএস রোড, কবরস্থান রোড, বান্দাঘাটা মোড়, প্যারাডাইস মোড়, সিগনাল টাওয়ার এলাকা, প্রায় সব জায়গায় হাঁটু পানি জমে আছে।
পৌর এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা তমিজ তালুকদার ও আঃ সালাম হাওলাদার অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার পাশাপাশি শহরের অভ্যন্তরে ঠাকুরানী খালের দুই পাড় প্রভাবশালীদের দখলে থাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে ভারী বৃষ্টিপাত বা জোয়ারের সময় পানি শহরে ঢুকে রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
সাবেক প্যানেল মেয়র মো. আলাউদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, গত সরকারের আমলের শেষ দিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি বড় ড্রেনেজ প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও বর্তমান পৌর প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করেনি।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে খুলনার মাছের ঘের-সবজি ক্ষেত
চাঁদপাই ইউনিয়নের মাছমারা এলাকা, চিলা ইউনিয়নের বৈদ্যমারী ও জয়মনি, চাঁদপাই ইউনিয়নের তালতলা সড়ক ও আশপাশ, সুন্দরবন ইউনিয়নের টাটিবুনিয়া, মিঠাখালী ইউনিয়নের চটেরহাট ও মোল্লার হাট, বুড়িরডাঙ্গা ও সোনাইলতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব এলাকায় বসতঘর, দোকানপাট ও ঘের পানিতে ডুবে গেছে। ফলে রান্না-বান্না থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কার্যক্রম সবই বিপর্যস্ত।
চাঁদপাই এলাকার ব্যবসায়ী মকবুল শেখ বলেন, 'জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট ও মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। আমাদের ব্যবসা একদম থমকে গেছে। বাড়ির সামনের রাস্তায় হাঁটু পানি। আজ দুপুরেও রান্না হয়নি।'
মোংলা উপকূলে জাল ফেলে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানান, বঙ্গোপসাগর এতটাই উত্তাল হয়ে উঠেছে যে তাঁরা জাল ফেলতে পারছেন না। ঢেউয়ের মুখে টিকতে না পেরে বাধ্য হয়ে তাঁরা সুন্দরবনের কিনারায় ফিরে এসেছেন।
মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর পণ্য খালাস ও বোঝাই কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মাকরুজ্জামান। তিনি বলেন, 'হারবাড়িয়া এলাকায় একটি সারবাহী জাহাজসহ বর্তমানে ৬টি জাহাজ অবস্থান করছে। কিন্তু বৃষ্টির সময় সার খালাস বন্ধ রাখতে হয়েছে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে।'