জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩ মার্চ ভাড়াটিয়া প্রভাষক মুরাদুজ্জামানের পাশবিকতার শিকার হয় বগুড়া ধুনটের ওই স্কুলছাত্রী। এ ঘটনায় মামলা করা হলে ১২ মে মুরাদুজ্জামানকে গ্রেফতার করেন তৎকালীন ধুনট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কৃপা সিন্ধু বালা। জব্দ করা হয়েছিল দুটি স্মার্ট ফোন। এর একটি ফোনেই ছিল ভিকটিমকে নির্যাতনের ভিডিওচিত্র।
তদন্ত কর্মকর্তা কৃপার অফিস কক্ষে সেই আলামতের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন ভুক্তভোগীর বাবা-মা ও স্থানীয় সাংবাদিকসহ অন্তত পাঁচ জন। তবে ১২ তারিখ ফোনটি জব্দ করা হলেও তালিকায় দেখানো হয় সাতদিন পরের তারিখ।
শিক্ষক দম্পতির অভিযোগ, অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে এই সময়ের মধ্যে আদমদিঘী থানায় কর্মরত পুলিশের এক উপ-পরিদর্শকের (এসআই) কাছে পাঠানো হয় জব্দ স্মার্টফোন। অতীতে সিআইডিতে কাজ করা ওই এসআইকে দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও গায়েব করতে নির্দেশনা দেন কৃপা সিন্ধু।
আইনভঙ্গ করে আদালতের নির্দেশ ছাড়া মামলার আলামত স্থানান্তরের বিষয়টি জানতে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বর্তমান কর্মস্থল টঙ্গী শিল্প পুলিশ থানায় গিয়ে সাক্ষাৎ চাইলে অন্য কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অস্বীকৃতি জানান কৃপা সিন্ধু বালা। মোবাইল ফোনে কয়েকদফা চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি সংযোগ। সহকর্মীদেরও জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত নম্বর যেন না দেয়া হয় গণমাধ্যমকে। তবে অনুসন্ধানে আলামত স্থানান্তর সংক্রান্ত এক কলরেকর্ড আসে সময় সংবাদের হাতে।
এতে বলতে শোনা যায়, ‘মোবাইল নিয়ে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েছি। সফটওয়্যার দিয়ে কাজ করছে।’
আরও পড়ুন: অশ্লীল ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ, কলেজছাত্রীর সংবাদ সম্মেলন
বিচারবঞ্চিত হওয়ার অনিশ্চয়তা থেকে বাদীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় পিবিআইকে। মূল মামলার তদন্তের পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্ত বসে অভিযুক্ত কৃপা সিন্ধুর বিরুদ্ধে। অভিযোগের সত্যতার বিষয়টিও স্বীকার করেন তৎকালীন পিবিআই বগুড়ার পুলিশ সুপার। তবে সাবেক পিবিআই প্রধান বনজ কুমারের নির্দেশে ওসি কৃপা সিন্ধুকে মূল মামলার অভিযোগপত্রে আসামি করা যাবে না বলে জানানো হয় বাদীকে। তবে বাদী বলছেন, তাকে আসামি করা না হলে সুবিচার নিশ্চিত সম্ভব নয়।
এদিকে, মোড় ঘুরিয়ে মামলাকে দুর্বল করতে নয়-ছয়ের উদাহরণ আছে আরও। টিকাকার্ড, জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন সরকারি নথিতে ভুক্তভোগীর বয়স ১৬ হলেও বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রাথমিক মেডিকেল রিপোর্টে তার বয়স বাড়িয়ে দেখানো হয় ১৮ থেকে ১৯ বছর।
পিবিআইর বগুড়ার পুলিশ সুপার শাহ মমতাজ উদ্দিন বলেন, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা একটাই, সত্যটাকে বের করে আনা। তাই আদালতের নির্দেশে ঘটনার পুনঃতদন্ত চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক জানান, ওসি কৃপার মতো প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের ফৌজদারি আইনে বিচারের পাশাপাশি অন্যায় ধামাচাপা দিতে যারাই সহযোগিতা করেছে সেই চক্রের প্রত্যেককেই বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
]]>