গত ১৭ আগস্ট ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করেন বিপ্র-এর উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলাম। মোট আটজন ঠিকাদার দরপত্র উত্তোলন করলেও, জমা পড়ে মাত্র দুটি। ২ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলার দিন দেখা যায়, উভয় দরদাতা-ই প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০ শতাংশের বেশি কম মূল্য প্রস্তাব করেছেন। অথচ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী, প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১০ শতাংশের বেশি কম বা বেশি দর হলে সেই দরপত্র বাতিলযোগ্য বলে গণ্য হয় (আইনের ৩১ ধারা, ৩ উপধারা)।
আইন অনুযায়ী দরপত্র বাতিল হওয়ার কথা থাকলেও, প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ কম দর দেয়া সত্ত্বেও পণ্ডিত ট্রেডার্স নামের একটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
একটি উদাহরণে দেখা গেছে, মেহেরপুর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার, কিন্তু ভাড়া ধরা হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা প্রতি টন। অথচ মেহেরপুর থেকে মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরের ঝিনাইদহের জন্য ভাড়া ধরা হয়েছে ৯০০ টাকা। প্রায় তিনগুণ বেশি দূরত্বের ভাড়ার পার্থক্য মাত্র ১০০ টাকা, যা অযৌক্তিক ও প্রকৃত বাজারদরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, 'এ ধরনের অযৌক্তিক রেট পেলে সাধারণত টেন্ডার বাতিল হয় এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করার বিধান রয়েছে। তাই এই টেন্ডার পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছি।'
আরেক ঠিকাদার বলেন, 'এত কম দামে কাজ দেয়া হলে ঠিকাদার পরে নানা অজুহাতে পরিবহনে ব্যর্থ হতে পারেন। তখন কৃষকরা সময়মতো বীজ না পেলে তা বোরো মৌসুমে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।'
আরও পড়ুন: এ বছর কৃষি খাতে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে সরকার: সচিব
বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অফিসিয়াল নাম্বারেও সাড়া মেলেনি। তার অনুপস্থিতিতে কার্যালয়ে থাকা সহকারী পরিচালক ও টেন্ডার কমিটির সদস্য সচিব এটিএম আরিফুর রহমান বলেন, 'আমার কাছে দরপত্র সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য নেই। ডিডি স্যার ও ক্যাশিয়ার ছাড়া কাগজপত্রও দেখানো সম্ভব নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দরপত্র খোলার পর রেজুলেশন করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকেই অনুমোদন হবে। তবে প্রাক্কলিত ব্যয়ের অস্বাভাবিক পার্থক্যের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।'
বিএডিসির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ) মোশাব্বের হোসেন জানান, 'আইনের বাইরে গিয়ে কমিটির কিছু করার সুযোগ নেই। পিপিআর অনুসারেই কাজ করতে হবে। বিষয়টি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছেনি। পেলে যাচাই করে দেখা হবে।'
বিএডিসির চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, 'নিয়মের বাইরে গিয়ে টেন্ডার দেয়া সম্ভব নয়। আপনি যে তথ্য দিয়েছেন, সেটি আমরা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অনিয়ম করে কাউকে কাজ দেয়ার সুযোগ নেই।'