মেডিকেল বর্জ্য বাণিজ্য সিন্ডিকেটে, ঝুঁকির মুখে জনস্বাস্থ্য

২ সপ্তাহ আগে
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে হাসপাতালের বর্জ্য বাইরে বিক্রি যেন ওপেন সিক্রেট। এর পেছনে কাজ করছে হাসপাতাল, সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি চক্র। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করে বর্জ্য থেকে সংগ্রহ করা চিকিৎসা সরঞ্জাম ফের ব্যবহার করায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।

চিকিৎসাবর্জ্যকে স্পর্শকাতর হিসেবে গণ্য করা হলেও বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই উদাসীন হাসপাতালগুলো। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে শৃঙ্খলায় আনতে সরকার ২০০৮ সালে নীতিমালা প্রণয়ন করলেও তা রয়ে গেছে কেবল কাগজে-কলমেই। মাঠ পর্যায়ে এর খুব একটা প্রতিফলন নেই।

 

নীতিমালায় মেডিকেল বর্জ্য অপসারণ, ধ্বংস করা ও প্রক্রিয়াজাত নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না মোটেও। তদারকির জন্য দায়িত্বশীলরা যেন দেখেও দেখেন না। ফলে মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে ঝুঁকি এড়ানো যাচ্ছে না।

 

অনুসন্ধান বলছে, হাসপাতালগুলো থেকে পাওয়া দুই ধরনের চিকিৎসাবর্জ্য অবৈধভাবে বাইরে বিক্রি হয়। এজন্য হাসপাতালগুলোতে রয়েছে আলাদা সিন্ডিকেট। চিকিৎসা কাজে ব্যবহৃত কাচের বোতল, সিরিঞ্জ, স্যালাইন ব্যাগ ও প্লাস্টিক নলসহ যেসব বর্জ্য নষ্ট করে ফেলার কথা তা চলে যায় অন্য একটি পক্ষের কাছে।

 

আরও পড়ুন: পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখন নিজেই ‘অসুস্থ’, ব্যাহত স্বাস্থ্যসেবা

 

পরবর্তীকালে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুনঃব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সঠিক প্রক্রিয়ায় জীবাণুমুক্ত না করেই পরিষ্কার ও প্যাকেটজাত করে ওষুধের দোকান, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পৌঁছে যায়। এসব উপকরণ সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত না হলে পুনর্ব্যবহারে থাকে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি।

 

প্রায় একই অবস্থা পুনঃচক্রায়নযোগ্য চিকিৎসাবর্জ্যের ক্ষেত্রে। ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্লেড, ছুরি, কাঁচি, রক্তের ব্যাগ ও নল, ধাতব উপকরণ নষ্ট না করে সংক্রামিত অবস্থাতেই ভাঙ্গারির দোকানে বিক্রি করা হয়। এসব বর্জ্য পরিবহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের থাকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।

 

শুধু মেডিকেল বর্জ্যকে ঘিরে পুরান ঢাকার চকবাজার ও লালবাগ এলাকায় গড়ে উঠেছে শতাধিক ভাঙ্গারির দোকান। এর মধ্যে নামাপাড়া, টাইগার গলি, ইসলামবাগ, বাঁশপট্টি, শহীদ নগর, কিল্লার মোড় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব এলাকায় গড়ে ওঠা ছোট ছোট দোকানে মজুত রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত স্যালাইন, সিরিঞ্জ, নল, যা অরক্ষিতভাবে বাছাই করছে শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সি মানুষ।

 

আরও পড়ুন: অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে নেই চক্ষু বিশেষজ্ঞ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

 

টিআইবি বলছে, চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইনের বিভিন্ন দুর্বলতা রয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদফতর, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে।

 

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 

আমাদের আইনের বিধিমালাতে ঘাটতি আছে। কিন্তু যতটুকু আছে, সেটারও যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তাই যারা এসব নিয়ম মানছে না, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

 

মেডিকেল বর্জ্য নিয়ে চলমান অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে উঠতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এখনই এগিয়ে না এলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও প্রকট হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন