মেঘের বিস্ফোরণ: আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ রূপ

৪ সপ্তাহ আগে
দক্ষিণ এশিয়ায় সম্প্রতি একাধিক মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, যা ভয়াবহ প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছে। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি প্রমাণ করে, কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে একটি ছোট এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে।

চলতি আগস্টে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় আকস্মিক মেঘ বিস্ফোরণে ভয়াবহ বন্যা ও ভূমিধস হয়। এতে নিহত হন অন্তত ৩২০ জন, যার মধ্যে শুধু বুনের জেলাতেই ১৫৭ জন প্রাণ হারান। নিখোঁজ ও আহতের সংখ্যাও অনেক।

 

এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের কিশ্তওয়ার জেলার চোসিতি গ্রামে মেঘ বিস্ফোরণে বন্যা হয়। এতে অন্তত ৬৫ জন নিহত, ৩০০ জনের বেশি আহত এবং ২০০ জনের বেশি নিখোঁজ হন। এর আগে গত ৫ আগস্ট দেশটির উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে মেঘ বিস্ফোরণ ও হিমবাহ ভাঙনের ঘটনায় আকস্মিক বন্যা হয়। এতে ৫ জন নিহত এবং ৫০ জনের বেশি নিখোঁজ হন।

 

মেঘের বিস্ফোরণ কী?

 

মেঘের বিস্ফোরণ হলো এমন এক ধরনের বৃষ্টিপাত, যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অস্বাভাবিকভাবে প্রবল বৃষ্টি নামে। সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হলে তাকে মেঘ বিস্ফোরণ ধরা হয়। এর সময়সীমা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা হতে পারে, তবে এর প্রভাব হয় ভয়াবহ।

 

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ভয়াবহ বন্যায় মৃত বেড়ে ৬০, নিখোঁজ ২০০

 

কেন বা কীভাবে হয়?

 

পাহাড়ি এলাকায় আর্দ্র বাতাস দ্রুত ওপরে উঠে ঠাণ্ডা হয়ে ঘনীভূত হয়। এতে স্বল্প জায়গায় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প জমা হয়। হঠাৎ করে বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হলে এই বিপুল পরিমাণ জলীয়বাষ্প একসঙ্গে প্রচণ্ড বৃষ্টি হিসেবে নেমে আসে, যা দেখে মনে হয় যেন আকাশ ফেটে গেছে। অনেক সময় হিমবাহ বা গ্লেসিয়ার ভেঙে পড়ার কারণেও এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

 

মেঘ বিস্ফোরণ ও অতি বৃষ্টির পার্থক্য

 

অতিবৃষ্টি হলো, দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তৃত এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত। যেমন—বাংলাদেশের মৌসুমি বন্যা। আর মেঘ বিস্ফোরণ হলো, অল্প এলাকায় অল্প সময়ে অত্যধিক বৃষ্টিপাত। এটি সাধারণ বন্যার চেয়ে অনেক দ্রুত ও ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনে।

 

সাম্প্রতিক ঘটনা ও বাংলাদেশে প্রেক্ষাপট

 

সম্প্রতি মেঘ বিস্ফোরণের ভয়বহ ঘটনা ঘটেছে পাকিস্তান ও ভারতে। বাংলাদেশে বড় আকারে নথিভুক্ত মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনা নেই। তবে পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প সময়ের প্রবল বৃষ্টিপাত প্রায়ই হয়, যা ছোট আকারে মেঘ বিস্ফোরণধর্মী পরিস্থিতি তৈরি করে। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ৭১ জন মারা যান। এতে ৫৮ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

বাংলাদেশ সমতলভূমি হওয়ায় এখানে ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম। তবে পাহাড়ি চট্টগ্রাম এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়। সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চল, নদীর উৎস বা হিমবাহের কাছাকাছি এলাকা এবং সংকীর্ণ উপত্যকা ও অপ্রশস্ত নদীপথে হঠাৎ জমে থাকা জলীয়বাষ্প একসঙ্গে নেমে আসার সুযোগ থাকে।

 

আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু ২৫০ ছাড়াল

 

পূর্বাভাসের ব্যবস্থা আছে কি?

 

বর্তমানে মেঘ বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেয়া সম্ভব নয়। আবহাওয়া অধিদফতর সাধারণত অতিবৃষ্টি ও বজ্রঝড়ের পূর্বাভাস দিতে পারে। কিন্তু এত স্বল্প এলাকায়, এত অল্প সময়ের ঘটনার জন্য আলাদা সতর্কবার্তা দেয়া এখনও প্রযুক্তিগতভাবে কঠিন। তবে আধুনিক রাডার, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি এবং স্থানীয় মনিটরিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ঝুঁকি কিছুটা আগে শনাক্ত করা সম্ভব।

 

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব 

 

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বায়ুমণ্ডলে বেশি জলীয়বাষ্প জমা হয়। এর ফলে স্বল্প এলাকায় হঠাৎ করে অতিবৃষ্টির আশঙ্কা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মেঘ বিস্ফোরণের ঘটনাও আরও বাড়তে পারে।

 

মেঘের বিস্ফোরণ কোনো সাধারণ বর্ষণ নয়—এটি মুহূর্তের মধ্যে পাহাড়ি বা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে। দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্প্রতিক প্রাণহানির ঘটনা আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো বড় আকারে এমন ঘটনা না ঘটলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ ঝুঁকি ভবিষ্যতে বাড়তে পারে। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া জরুরি।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন