জানা যায়, এ অবস্থায় ঝুঁকি বিবেচনা করে দ্রুত অবৈধ ঘাটটি অপসারণ করে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।
তবে ইজারাদারের দাবি, জনস্বার্থে ইজারা শর্তের মধ্যেই তিনি ঘাটটি স্থাপন করেছেন।
বিআইডব্লিটিএ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজারার নাম করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর প্রান্তে মেঘনার প্লাবন ভূমি ও তীর দখল করে অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে জেটিঘাট। আশুগঞ্জ উপজেলা বয়লার মালিক সমিতি সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজ ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের জন্য মেঘনার তীর ইজারা নিয়ে ঘাটটি তৈরি করেছেন।
এই ঘাটটি নির্মাণের ফলে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ভারী মালামাল নিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের ৪০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ২২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। এতে করে সড়কের নিচে থাকা পাওয়ার প্ল্যান্টের কোলিং ওয়াটার পাইপ, ‘র’-ওয়াটার পাইপ, ফায়ার সার্ভিস ওয়াটার পাইপ, খাবার পানির পাইপলাইন ঝুঁকিতে পড়েছে। পাশাপাশি বালি দিয়ে তৈরি সড়কটির ধুলাবালির কারণে প্ল্যান্টের এয়ার ফিল্টার জ্যাম হয়ে যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ উৎপাদন। ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে পাওয়ার প্ল্যান্টের মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে হঠাৎ ইনানী জেটি ভেঙে দ্বিখণ্ডিত
দেশে বাড়তে পারে লোডশেডিং এর মাত্রাও। এ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষার স্বার্থে চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ এক চিঠির মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করেন। পাশাপাশি ঘাটটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্যে অনুরোধ জানিয়েছেন।
এ দিকে মো. রুবেল মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ঘাটটির গুরুত্ব রয়েছে। ধান-চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী নদীপথে আমদানি করা হলে নদীর তীরে পণ্য রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া পরিবহনের মাধ্যমে এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ঘাটটি অপসারণ করা হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিপাকে পরবেন।
এ দিকে ইজারাদার মো. শাহজাহান সিরাজ জানান, ‘জনস্বার্থে ইজারা বিধি মেনেই ঘাটটি তৈরি করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘাটটি নির্মাণের পর থেকে ভৈরব আশুগঞ্জ নৌবন্দরের বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন তার কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন।
আরও পড়ুন: মোংলা বন্দরে অ্যালার্ট-১ জারি, জেটিতে দুই যুদ্ধজাহাজ
তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তন হয়েছে এখনো আগের অবস্থা কোথাও কোথাও রয়ে গেছে। এতো টাকা আমরা কোথা থেকে এবং কেন দেব? চাঁদা না পেয়ে তিনি এসব করছেন।
শাহজাহান সিরাজ আরও জানান, সরকার না চাইলে আমি ঘাটটি সরিয়ে নেব। সেই সঙ্গে আমি ক্ষতিপূরণ দাবি করবো। কারণ অর্থের বিনিময়ে আমি ঘাটটি ইজারা নিয়েছি। অন্যথায় আমি আইনের আশ্রয় নেব।
এ দিকে মেঘনার তীর এবং প্লাবন ভূমি দখলে একাধিক স্থানে ঘাট নির্মাণ করায়, বিআইডব্লিউটিএর ইজারা বিধি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নদী ও প্রকৃতি সুরক্ষা সামাজিক আন্দোলন ‘তরীর’ বাংলাদেশের আহবায়ক মো. শামীম আহমেদ।
তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের রহস্যজনক ভূমিকার কারণে নদীর তীর দখল হচ্ছে। নদীর প্লাবন ভূমি দখল হচ্ছে। তারা বিষয়গুলো জেনেও অনেকটা নীরব। এ বিষয় নিয়ে তিনি জেলা নদীরক্ষা কমিটির বৈঠকে উত্থাপন করবেন। পাশাপাশি নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ করবেন বলেও জানান মো. শামীম আহমেদ।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বন্দরে জট, জাহাজ মালিকরা বিপাকে!
অপরদিকে আশুগঞ্জ-ভৈরব নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা) মো. মহিউদ্দিন খাঁন জানান, নদীর তীর আমরা ইজারা দিয়েছি। ঘাট তৈরির অনুমোদন দেয়া হয়নি। ইজারার শর্ত ভঙ্গ করায় ঘাটটি অপসারণ করার জন্যে জেলা প্রশাসক, আশুগঞ্জ থানা এবং ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান, দ্রুত ঘাটটি অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্যে উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইজারার নাম করে আশুগঞ্জ-ভৈরব সেতু এলাকার আশুগঞ্জ প্রান্তে অন্তত ২০টি স্থানে অবৈধভাবে ঘাট তৈরি করা হয়েছে। এসব ঘাট থেকে প্রতিদিন লাখ-লাখ টাকা ইজারা আদায় করা হচ্ছে।