রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি বিষয় ছাড়া, ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন জ্ঞান যা থেকে উপকার নেওয়া হয়, ৩. নেক সন্তান যে তার জন্য দুআ করে। (সহিহ মুসলিম: ১৬৩১)অতএব, মৃতব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি বা বিলাপ নয়, বরং ইস্তিগফার ও দুআই হলো সবচেয়ে উত্তম উপহার।
মৃতের ভালো দিকগুলো স্মরণ করার নির্দেশনা
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়েছেন, মৃতের বিষয়ে সর্বদা সুন্দর ও ইতিবাচক কথা বলতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রা. থেকে বর্ণিত;
اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ وَكُفُّوا عَنْ مَسَاوِيهِمْ তোমরা তোমাদের মৃতদের ভালো কাজগুলো স্মরণ করবে এবং তাদের দোষত্রুটি উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকবে। (সুনান আবি দাউদ: ৪৯০০) কারণ মৃতের প্রতি কল্যাণকামিতা দেখানোই একজন মুসলমানের প্রকৃত দায়িত্ব।
আরও পড়ুন: যেভাবে আল আকসা বিজয় করেছিলেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবি রহ.
লাশ দেখলে যে দুআ পড়তে হয়
হাদিসে মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে দুআ করার শিক্ষা রয়েছে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছেন, মৃতদেহ দেখলে বা জানাজায় উপস্থিত হলে নিম্নোক্ত দুআ পড়া অত্যন্ত উত্তম
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبًى حَسَنَةً উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ালাহু, ওয়া আকিবনি মিনহু উকবান হাসানাতান। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দাও। (সুনান ইবনু মাজাহ: ১৪৪৭)
উম্মে সালামাহ রা.-এর ঘটনা
উম্মে সালামা রা. বর্ণনা করেন,
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, إِذَا حَضَرْتُمُ المَرِيضَ أَوِ المَيِّتَ فَقُولُوا خَيْرًا؛ فَإِنَّ المَلائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ তোমরা যখন রোগীর কাছে বা মৃতদেহের সামনে উপস্থিত হবে, তখন ভালো কথা বলবে। কেননা ফেরেশতারা তোমাদের কথার ওপর আমিন বলে। (সহিহ মুসলিম: ৯১৯) উম্মে সালামা রা. -এর স্বামী আবু সালামা রা. ইন্তেকাল করলে, তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জানালে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبًى حَسَنَةً তুমি বলো: হে আল্লাহ! আমাকে ও তাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দাও। উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি নবীজির সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শেখানো সেই দুআ পড়লাম, আর আল্লাহ আমাকে তার চেয়েও উত্তম প্রতিদান হিসেবে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে স্বামী হিসেবে দান করলেন। (সুনান ইবনু মাজাহ:১৪৪৭)
কুরআনে মাগফেরাতের দোয়া
কুরআনে আল্লাহ তাআলা আমাদের শিখিয়েছেন, শুধু নিজের জন্য নয়, বরং সব ঈমানদার মুসলমানদের জন্য দুআ করতে হবে। ইবরাহিম আ. -এর দুআ رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ উচ্চারণ: রব্বানাগ ফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুমিমিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব। অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাবের দিন আমার, আমার পিতা-মাতার এবং সব ঈমানদারদের গুনাহ ক্ষমা করুন। (সুরা ইবরাহিম:৪১)
নুহ আ. এর দুআ
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ উচ্চারণ: রব্বিগ ফিরলি ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়া মুমিনান ওয়ালিল মুমিমিনা ওয়ালমুমিনাত। অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, আমার ঘরে ঈমান নিয়ে প্রবেশকারীকে, সব মুমিন পুরুষ ও নারীকেও ক্ষমা করুন। (সুরা নূহ:২৮)
মৃত্যুর পর মৃতের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হলো দুআ। বিলাপ, কান্নাকাটি বা শোক প্রকাশ তার কোনো কাজে আসে না। ইসলামের শিক্ষা হলো ,মৃতের সুন্দর দিকগুলো স্মরণ করা, আল্লাহর কাছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, এবং সব মুসলমানের জন্য মাগফেরাত কামনা করা।
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى المَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ তোমরা যখন মৃতের জানাজা পড়বে, তার জন্য আন্তরিকভাবে দুআ করো। (সুনান আবি দাউদ: ৩১৯৯) আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এ শিক্ষার ওপর আমল করার তাওফিক দিন।