মুসলিম নারী কেন অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন না?

৩ সপ্তাহ আগে
ইসলাম মুসলিম অমুসলিমদের মাঝে বিবাহকে উৎসাহিত করে না। ইসলামের সাধারণ নীতি হচ্ছে, একজন মুসলিম নারী বা পুরুষের উচিত, কেবল মুসলিম জীবনসঙ্গীকে বিয়ে করা।

তবে একজন মুসলিম নারী, যতই গুণবতী হোন না কেন, ইসলামি আদর্শ অনুসারে তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জীবনসঙ্গী হচ্ছেন একজন মুসলিম পুরুষ। কারণ, বিয়ে কেবল যৌন চাহিদা পূরণের জন্য নয়; বরং এটি একটি পবিত্র জিনিস। যার মাধ্যমে গড়ে ওঠে একটি শান্তিপূর্ণ, ঈমানদার ও ইসলামি নীতিতে পরিচালিত পরিবার। এই আদর্শ বাস্তবায়নে প্রয়োজন পরিবারজুড়ে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করা ও তার বার্তা প্রচারের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকা।

 

ইসলাম একজন মুসলিম নারীকে অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে, মূলত তাকে এমন কিছু থেকে রক্ষা করার জন্য, যা তার বিশ্বাস ও ঈমানের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। ইসলামের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, ধর্ম রক্ষা করা। এজন্য কোনো এমন কাজে লিপ্ত হওয়া থেকে মুসলিমদের নিষেধ করা হয়েছে, যা তাদের ধর্মীয় জীবনের জন্য বিপজ্জনক।

 

আরও পড়ুন: মৃত্যুর পর শিশুরা কোথায় থাকে?

 

বিশেষত, একজন মুসলিম নারী যখন একজন ইহুদি বা খ্রিষ্টান স্বামীর সঙ্গে জীবন কাটান, তখন তিনি নিজের ধর্মকে নিরাপদভাবে চর্চা করতে পারবেন না। অধিকাংশ আহলে কিতাব আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করেন না। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন,

 

ইহুদিরা কখনোই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, আর খ্রিষ্টানরাও না, যতক্ষণ না তুমি তাদের ধর্ম অনুসরণ করো। বলো নিশ্চয়ই আল্লাহর পথনির্দেশই হলো প্রকৃত পথনির্দেশ। আর যদি তুমি তাদের খেয়াল-খুশি অনুসরণ করো জ্ঞান লাভের পর, তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমার কোনো রক্ষাকর্তা ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সুরা আল-বাকারা: ১২০)

 

 

আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাধারণত পরিবারে স্বামীকেই কর্তৃত্বশীল হিসেবে ধরা হয়। তাই যদি স্বামী অমুসলিম হন, তাহলে স্ত্রীকে তার ধর্মীয় চর্চায় বাধা দিতে পারেন, যেমন রোজা রাখা, রোজায় স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধ রাখা ইত্যাদি। এভাবে ধাপে ধাপে স্ত্রীকে তার ধর্ম থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে পারেন। আর যদি স্ত্রী রাজি না হন, তাহলে তা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়াতে পারে।

 

একজন খ্রিষ্টান বা ইহুদি পুরুষ ইসলাম, কুরআন ও নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে মেনে নেন না। এক্ষেত্রে একজন মুসলিম নারী কিভাবে এমন একজন পুরুষের সঙ্গে বসবাস করবেন, যিনি তার ধর্ম, ধর্মীয় দায়িত্ব ও বিধি-বিধানকে সম্মানই করেন না?

 

শায়খ মুহাম্মদ আল-হানূতী (উত্তর আমেরিকার ফিকহ কাউন্সিলের সদস্য) বলেন,

 

যদি আল্লাহ একজন মুসলিম নারীকে অমুসলিম পুরুষকে বিয়ে করতে নিষেধ করেন, তাহলে একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের সেটি বিশ্বাস করতে হবে ও মান্য করতে হবে। ইসলাম মানে হলো—আল্লাহ ও তার রসুল যা বলেছেন, সেটাই মেনে চলা। কুরআনে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তার রসুলের সামনে নিজেদের মতামতকে অগ্রাধিকার দিও না। (সুরা হুজুরাত)

 

তিনি আরও বলেন, একজন অমুসলিম স্বামী স্ত্রীর ওপর অনেক বিষয়ে জোর করতে পারে। এক মুসলিম নারী তার ধর্মমতে চলতে পারবেন কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। আর ইসলামে বিয়ের উদ্দেশ্য হলো—একটি ভালো ইসলামিক জীবন গঠন করা, যেখানে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা মূল লক্ষ্য। যদি একজন নারী অমুসলিম স্বামীর সঙ্গে বিবাহিত থাকেন, তাহলে হয়তো তার দাম্পত্য জীবনে অর্জিত হবে কেবল সেইসব বিষয়, যা পশুদের মধ্যেও দেখা যায়।

 

শায়খ ইউসুফ আল-কারযাভি তার বই The Lawful and the Prohibited in Islam-এ বলেন, একজন মুসলিম নারীর জন্য অমুসলিম পুরুষ হোক সে আহলে কিতাব বা মুশরিক কে বিয়ে করা হারাম। আল্লাহ বলেন, তোমরা মুশরিকদের সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। (সুরা আল-বাকারা: ২২১)

 

তিনি আরও বলেন,

 

যখন মুসলিম নারীরা হিজরত করেছিল, আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি তাদের ঈমানদার বলে চেন, তাহলে তাদের অমুসলিম স্বামীদের কাছে ফেরত দিও না। তারা তাদের জন্য বৈধ নয় এবং তারাও তাদের জন্য বৈধ নয়। (সুরা আল-মুমতাহিনা: ১০)

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন