মুসলমানদের জন্য কি কৌতুক করা না জায়েজ?

২ সপ্তাহ আগে
মানুষের মাঝে একটি সাধারণ ভুল ধারণা হলো, ইসলাম কঠোর বিধিনিষেধের মাঝে সীমাবদ্ধ। মুসলমানরা হাসি-মজা করতে পারে না। অথচ, ইসলাম আমাদের জীবনে আনন্দ করার সুযোগ দেয়, তবে তা অবশ্যই নির্ধারিত সীমানা ও শালীনতার মধ্য দিয়ে। এ নিবন্ধটি আমাদের দেখাবে কীভাবে একজন মুসলিম হিসেবে আমরা জীবন উপভোগ করতে পারি, ইসলামের নিয়ম ও নীতিগুলো মেনে চলার মাধ্যমে।

সম্ভবত ইসলামের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভুল ধারণাগুলোর একটি হলো, মুসলমানরা মজা করতে পারে না। আপনি যদি কিছু লোককে জিজ্ঞেস করেন মুসলমানদের বর্ণনা করতে পাঁচটি শব্দ বলতে, নিশ্চিতভাবেই সেখানে ‘মজা’ শব্দটি থাকবে না। মুসলমানদেরও নিজেদের ইসলামের প্রকৃত ভাবনা নিয়ে চিন্তা করা উচিত।

 

গ্রীষ্মকালে আমরা কীভাবে আচরণ করব? আমরা কীভাবে মজা করব এমনভাবে যাতে আমাদের বিশ্বাস ও নিয়মাবলি বজায় থাকে। ইসলামের কোনো বিধানের লঙ্ঘণ না হয়। 

 

আরও পড়ুন: শাম অঞ্চল নিয়ে কোরআন ও হাদিসে যা বলা হয়েছে

 

ইসলাম আমাদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে। তবে তা এমন নয় যে এই নিয়মগুলো আমাদের ঘাড়ের বোঝা হয়ে যাবে। বন্ধুরা যখন বাইরে মজা করছে, আমরা ঘরে বসে থাকব। ইসলাম সবসময় মধ্যপন্থা গ্রহণের কথা বলে। সীমানার মধ্যে থেকে আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ দেয়।

 

আল্লাহর নির্দেশনা মেনে চলা আমাদের কর্তব্য। একটি নতুন ইলেকট্রনিক গ্যাজেট কিনলে যদি আপনি এর নির্দেশিকা না পড়েন, তাহলে এটি ব্যবহার করতে গিয়ে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। তেমনিভাবে, আল্লাহ আমাদের জীবন পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা দিয়েছেন। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, আমাদের প্রয়োজন ভালোভাবে জানেন। কোরআন ও রসুলের সুন্নাহ আমাদের এই দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

 

এ নির্দেশনা অমান্য করলে আমরা জীবনে নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি, যেমন পরিবারে অশান্তি, আসক্তি, হতাশা। তবে ইসলামের নিয়ম মেনে চললে আমরা আনন্দের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারি।

 

গ্রীষ্মে আমরা পার্কে যাওয়া, সাঁতার কাটা, বা রোলার স্কেটিং করতে পারি, তবে তা শালীনতার সঙ্গে। সীমানার মধ্যে থেকে। আমরা যদি সাঁতার কাটি, তাহলে সাঁতার কাটাতেই মনোযোগ দেয়া উচিত, ফ্লার্টিং নয়। অনেক মুসলিম সংগঠন গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প আয়োজন করে, যেখানে মজার পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কে শেখার সুযোগ থাকে।

 

গ্রীষ্মকাল দ্রুত চলে যায়। সময়ের পরিকল্পনা করুন। প্রতিদিন কিছু ভালো কাজ করার চেষ্টা করুন। মসজিদে নামাজ আদায় বা বন্ধুদের সঙ্গে সেখানে সাক্ষাৎ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিন, নিজের পরিবারকে জানিয়ে রাখুন আপনি কোথায় আছেন। সময়মতো বাড়ি ফিরে আসুন। পিতামাতার নির্দেশ মেনে চলুন।

 

প্রিয় নবীও (সা.) রসিকতা করতেন। হজরত রসুলু্ল্লাহ (সা.) ও হজরত আলী (রা.)-এর খুরমা খাওয়া নিয়ে চমৎকার একটি ঘটনা আছে। এটি হলো, একদিন উভয়ে একসঙ্গে বসে খুরমা খেজুর খাচ্ছিলেন। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) খুরমা খেয়ে বিচিগুলো আলী (রা.)-এর সামনে রাখলেন। খাওয়া শেষে রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, যার সামনে বিচি বেশি সে অতিভোজী। হজরত আলী (রা.) দেখলেন রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে কোনো বিচিই নেই। তাই জবাব দিলেন, যে বিচিসহ খুরমা খেয়েছে, সে-ই বেশি পেটুক।

 

তবে ঠাট্টা ও কৌতুক করার সময় সামান্য পরিমাণেও দীনকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা যাবে না। কারণ এটি হলো ইসলাম ভঙ্গের কারণ। মহান আল্লাহ বলেন,

 

وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللهِ وَآيَاتِه وَرَسُولِه كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ ৬৫ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ তাদেরকে জিজ্ঞেস করলে তারা জোর দিয়েই বলবে, ’আমরা হাস্য রস আর খেল-তামাশা করছিলাম। বল, আল্লাহ, তার আয়াত ও তার রসূলকে নিয়ে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? ওযর পেশের চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা কুফরী করেছ। (সুরা আত তওবা ৬৫-৬৬)

 

আরও পড়ুন: আকিকার পর নাম পরিবর্তন করা যাবে?

 

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, মহান আল্লাহ, তার আয়াত ও তার রসুলকে নিয়ে ঠাট্টাকারী ব্যক্তি ঈমান আনার পরে কাফির হয়ে যায়। অনুরূপভাবে কতিপয় সুন্নাতকে নিয়েও ঠাট্টা করার ব্যাপারটি, যা খুবই বিস্তার লাভ করেছে। যেমন- দাড়ি, পর্দা ও টাকনুর উপর কাপড় পরিধান করা ইত্যাদি।
 

মুসলমানদের জন্য আনন্দের কোনো বাধা নেই, যতক্ষণ তা ইসলামের সীমানার মধ্যে থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়কে অর্থবহ ও উপভোগ্য করে তুলুন। জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে গিয়ে শালীনতা ও ধর্মীয় নীতিগুলোকে ভুলে যাবেন না। মুসলমানরাও মজা করতে পারে, তবে তা সর্বদা আদর্শের মধ্যে থেকেই।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন