মুন্সীগঞ্জে নির্বাচনের আগে বেড়েছে সহিংসতা

১ দিন আগে
মুন্সীগঞ্জে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে সহিংসতার মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেছে। অবৈধ ককটেল বিস্ফোরণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের প্রকাশ্য ব্যবহার এখন এলাকাবাসীর নিত্যনৈমিত্তিক আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহে গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকলেও উত্তেজনা কমছে না।

গত ২ নভেম্বর মোল্লাকান্দির বেহেরকান্দি গ্রামে সংঘর্ষে নিহত হন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তুহিন দেওয়ান। বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন তার মা লাকী আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটার কোনো দোষ ছিল না। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। রাজনীতির দ্বন্দ্বে তাকে মেরে ফেললো। আজও ন্যায় বিচার পেলাম না।’

 

এ ঘটনায় ৪ নভেম্বর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উজির আহম্মেদকে প্রধান আসামি করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় এখনও এলাকা ছাড়তে বাধ্য তুহিনের বাবা সেলিম দেওয়ান।

 

সপ্তাহ না পার হতেই ১০ নভেম্বর ফের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে মারা যান আরিফ মীর। পরদিন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রায়হান খান।

 

আরিফের স্ত্রী পারুল বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে তারা প্রকাশ্যে গুলি করে মেরেছে। আমি বিচার চাই। যারা এই হত্যার হুকুম দিয়েছে তাদের গ্রেফতার না করলে আরও রক্তপাত হবে।’

 

রায়হানের মা ছলিমন বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে হাসপাতালে রেখেও বাঁচানো গেল না। যারা এই সর্বনাশটা করল, তাদের কি কেউ ধরবে না? প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিয়েই চলেছে?’

 

এ ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আতিক মল্লিককে প্রধান আসামি করে ৫৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এজাহারভুক্ত দুজনসহ চারজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকি আসামিরা এখনও পলাতক।

 

আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে যুবলীগের মিছিল, ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

 

এদিকে ১৪ নভেম্বর আবারও গুলিবর্ষণে আহত হন আরও একজন।

 

এরপর সেনাবাহিনী মুন্সীগঞ্জ শহরের একটি বাড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা ও বোমা তৈরির আস্তানা উদ্ধারের ঘটনা নিশ্চিত করে। এতে এলাকায় আতঙ্ক আরও ছড়িয়ে পড়ে।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচন ঘিরে সংঘাত উসকে দিচ্ছে নানা স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের দাবি, মোল্লাকান্দিতে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, নিয়মিত টহল এবং প্রকৃত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। এক ভুক্তভোগীর স্বজন বলেন, ‘প্রতিদিন রাতেই গোলাগুলি। বাচ্চারা ভয় পেয়ে থাকে। আমরা এভাবে থাকতে পারি না।’

 

পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, ‘সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আমাদের অভিযান চলছে। আসামি গ্রেফতারে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। ওই এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফিরোজ কবির বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সহিংসতাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কেউ অপরাধ করে পার পাবে না। মামলার আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করতে সময় লাগছে।’

 

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ দশক ধরে মোল্লাকান্দিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহস্রাধিক সহিংসতা ঘটেছে। স্থানীয়দের মতে, অতীতের মতো এবারও সন্ত্রাসীদের তৎপরতা থামছে না।

 

মুন্সীগঞ্জ শহর থেকে মোল্লাকান্দির দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এখানকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে সদর থানা। তবে পুলিশের দাবি, তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন