নিহত সুদীপ্ত রায় ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ডে এলাকার শান্তিনগর এলাকার হিমাংশু কুমার রায়ের ছেলে। সে ২০২৫ সালে ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাশ করে রাজধানীর বারিধারায় ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ জগন্নাথপুর শাখায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সুদীপ্ত ছোট। তার বাবা-মা দু’জনেই শিক্ষক বলে জানা গেছে।
এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে সুদীপ্তর মৃত্যুর খবর পৌঁছালে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক ও স্বজনদের চোখে-মুখে শুধু একটাই প্রশ্ন একজন নিরীহ ছাত্রের প্রাণের দাম কি শুধু ৮০ লাখ টাকা?
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান।
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মুক্তিপণ না পেয়ে অপহরণকারীরা সুদীপ্তকে হত্যা করেছে। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আটকদের পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে জানান ওসি।
আরও পড়ুন: সিলেটে রেললাইনের পাশে মিলল কলেজছাত্রের বিচ্ছিন্ন দেহ
পুলিশ ও লিখিত অভিযোগের সূত্রে থেকে জানা গেছে, গত ৭ নভেম্বর বিকেলে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ হোস্টেল থেকে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন সুদীপ্ত। এরপর ভাটারা থানাধীন শহীদ আব্দুল আজিজ সড়ক থেকে আসামিরা তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরদিন রাত ২টা ৪৫ মিনিটে অপহরণকারীরা সুদীপ্তর ফোন ব্যবহার করে তার মাকে ফোন দেয় এবং ৮০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা। পরদিন আবার ফোন করে জানতে চায় পরিবার কত টাকা দিতে পারবে।
তখন সুদীপ্তর বাবা এক লাখ টাকা দিতে রাজি হন। কিন্তু অপহরণকারীরা বারবার ১০, ২০, ৩০ লাখ টাকার দাবি জানায়। শেষ পর্যন্ত ৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুদীপ্তর বাবা ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হলে অপহরণকারীরা তাকে টাকা নিয়ে ময়মনসিংহ যেতে বলে।
গভীর রাত হওয়ায় তিনি যেতে না পারায় অপহরণকারীরা ফোন কেটে দেয়। এরপর ৮ নভেম্বর ভাটারা থানায় অপহরণের অভিযোগ করেন হিমাংশু কুমার রায়। চার দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিয়াবাড়ীর একটি বাসার বাথরুম থেকে পুলিশ সুদীপ্তর মরদেহ উদ্ধার করে।
আরও পড়ুন: অপহরণের পর ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে থেকে কলেজছাত্র তুহিনের মৃত্যু
তাসনিমুল তানজিল নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘সুদীপ্তর হত্যাকারী পিয়াল। সে আগে হিন্দু ধর্মের ছিল,পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। সে সুদীপ্তকে টাকা ধার দেয়ার নাম করে মিরপুর-১০ এ নিয়ে যায়। সুদীপ্তর মরদেহ এখন মর্গে আছে। তার মরদেহের অবস্থা খুবই খারাপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘পেটে দুবার চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়। হাত পিছনের দিকে বাঁধা ছিল, হাঁটুবাঁধা ছিল, পা বাঁধা ছিল। মুখ পুরোটাই পলিথিন দিয়ে বাঁধা ছিল। তাকে অত্যন্ত নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। মরদেহ আমাদের দেখতে দেয়া হয়নি। তবে আমরা ছবি দেখে যতটুকু বুঝেছি তাকে মেরে একটি বাথরুমের কনে ফেলে রাখা হয়েছিল। আমরা তার হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’
ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষকরা বলেন, ‘সুদীপ্ত ছিল মেধাবী, বিনয়ী ও দায়িত্বশীল ছাত্র। তার এমন নির্মম মৃত্যুতে আমরা বাকরুদ্ধ। দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যেন দ্রুত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনে, সেটাই এখন সবার দাবি।’
আরও পড়ুন: গাজীপুরে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে কলেজছাত্র খুন
এ বিষয়ে ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান আকিব বলেন, ‘গত ৮ নভেম্বর নিহত শিক্ষার্থী সুদীপ্তর বাবা হিমাংশু কুমার রায় ভাটারা থানায় অপহরণের একটি অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে আমরা সুদীপ্তর সন্ধানে নামে পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম।’
ওসি আরও বলেন, ‘অপহরণের ৪ দিন পর একটি রুম বাথরুম থেকে সুদীপ্তের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে এরইমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে মরদেহ থানায় রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

২ সপ্তাহ আগে
৪






Bengali (BD) ·
English (US) ·