মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি’ নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
গ্রান্ডি বলেন, আট বছর আগে সেনাদের সহিংস অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। এর পাশাপাশি রাখাইনে এখনও অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত অবস্থায় জীবনযাপন করছে। যদিও আরাকান আর্মি বর্তমানে বেশিরভাগ এলাকা দখল করেছে, তবু রোহিঙ্গাদের অবস্থা অপরিবর্তিত।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা হলো গ্রেপ্তার ও আটক হওয়ার আশঙ্কা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষায় সীমিত প্রবেশাধিকার, চলাচলে বাধা, জোরপূর্বক শ্রম ও অবিরাম বৈষম্য।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন সহায়তা ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশের প্রশংসা করে ইউএনএইচসিআর প্রধান বলেন, দেশটি এখন প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে। ২০২৪ সালের নতুন সংঘাত শুরুর পর আরও দেড় লাখ শরণার্থীকে জায়গা দিয়েছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, অসংখ্য চ্যালেঞ্জের মাঝেও বাংলাদেশ সহানুভূতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
তিনি বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ১.২৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তার কথা উল্লেখ করলেও রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিলে বড় ঘাটতি রয়ে গেছে বলে সতর্ক করেন। এতে শিশুদের অপুষ্টি বাড়বে এবং অনেকে জীবন ঝুঁকিতে ফেলে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হবে।
গ্রান্ডি স্পষ্ট করে বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা যথেষ্ট নয়। তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে অর্থায়ন বাড়ানো, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া এবং শিক্ষা ও শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ তৈরির আহ্বান জানান।
রাখাইন উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করাকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পথ তৈরি করা সম্ভব হবে। তবে এজন্য মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সাহস দেখানো জরুরি বলে মন্তব্য করেন গ্রান্ডি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাবে যা আছে
তিনি আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে আহ্বান জানান, মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে এবং বাস্তুচ্যুত জনগণের জন্য স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে।
বক্তব্যের শেষে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের মানুষের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন অধ্যায় শুরু করতে হবে। রোহিঙ্গা সংকট মীমাংসার অন্য কোনো বিকল্প নেই।’
সূত্র: বাসস
]]>