কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে থাকা পানির প্রভাব থেকে ধানরক্ষায় অধিক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে খরচ বাড়ছে কয়েক গুণ বেশি। ঋণ করে ধানের চাষাবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ না উঠায় বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বা এর প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি।
গত ৫-৭ বছর ধরে সেচ প্রকল্পের ড্রেন দিয়ে এমন গরম ও দূষিত পানি ফসলি জমিতে যাচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটোরাইস মিলের ধান সিদ্ধ ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা ও কালো পানিতে নষ্ট হচ্ছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি। ঋণ করে ধান চাষাবাদ করে বিপাকে পড়েছেন সদর উপজেলার আতাহার, বুলনপুর, রাঁধুনীডাঙ্গা, বাইল্যাকান্দা মাঠের চাষিরা। কোথাও কোথাও জমির ফলন নেমে গেছে অর্ধেকে, আবার কোথাও শুধুমাত্র খড় পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিবাদ করলেই উল্টো ভয়ভীতি দেখান মিল মালিকরা।
নয়াগোলা এলাকার কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত ৬-৭ বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। অটোরাইস মিলের কেমিক্যালযুক্ত নোংরা পানি ছেড়ে দেয়া হয় ধানের জমিতে সেচ দেয়ার ড্রেনে। এসব পানি মিল থেকে সরাসরি এসে পড়ে। ফলে ধানের ফলন নেমে গেছে প্রায় অর্ধেকে। উল্টো নোংরা পানির কারণে খরচ বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। অন্যের জমি চাষাবাদ করে যে খরচ হচ্ছে, তার কোনো অংশই বাড়িতে তুলতে পারছি না।’
আরও পড়ুন: রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পে ‘খুন’ হচ্ছে প্রকৃতি
ষাটোর্ধ্ব কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না; করলেই দেয়া হয় হুমকি, ভয়ভীতি ও মামলার ভয়। মিলমালিকরা বড় বড় ব্যবসায়ী। তাদের অর্থবিত্তের কাছে আমরা অসহায়। এমন অবস্থা জানানোর পরও কোনো প্রতিকার পাই না আমরা। স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে রাইস মিল চালান তারা।’
আতাহার এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘হাজার হাজার বিঘা জমি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরপরেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদফতর ও কৃষি বিভাগ। তাদের কাছে বারবার অভিযোগ দিলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। অটোরাইস মিলমালিকদের অর্থবিত্তের কাছে তারাও যেন জিম্মি। কৃষকদের জন্য কেউ নেই।’
জেলা মিল মালিক ও আতপ ধান চাউল ব্যবসায়ী সমিতি এবং চাউল কল মালিক গ্রুপের কেউই এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি।
পরিবেশ অধিদফতর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাইদ জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ধান সিদ্ধ করা গরম পানি রাইস মিলের মধ্যে থাকা পুকুরেই রাখতে হবে। রাইস মিলের নোংরা পানি ফসলি জমিতে গিয়ে কৃষকদের ক্ষতি হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: কুয়াকাটা সৈকত থেকে ৩২৩ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ
জেলার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, ‘নোংরা পানি ফসলি জমিতে ছেড়ে কৃষকদের ক্ষতি করতে পারেন না অটোরাইস মিল মালিকরা। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলে তাদের সঙ্গে নিয়ে মিলমালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, জেলাজুড়ে মোট অর্ধশতাধিক অটোরাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ত্রিশটি মিল রয়েছে আতাহার-বুলনপুর এলাকায়। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৫৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে।