গত শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) আমতলী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে বিষপান করেন তনয়।
স্বজনরা তাকে প্রথমে আমতলী উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে বরিশাল শের-ই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তনয়কে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (৩০ নভেম্বর) তার মৃত্যু হয়।
বিষপানের আগে তনয় তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দীর্ঘ একটি পোস্ট দেন। সেই পোস্টে তিনি লেখেন, 'আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা ও পরিচিতজনরা অনেকেই আমার সমস্যার বিষয়ে জানেন। কিন্তু আপনারা হয়তো আসল ঘটনাটা জানেন না। আমি দীর্ঘ ছয় বছর আগে ফারুক গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতী মিমকে পারিবারিকভাবে বিয়ে করি। বিয়ের শুরুতেই রাকিব নামের একটি ছেলে আমাকে বলে, 'ভাই আপনি আমার বউকে বিয়ে করেছেন। মিমের সঙ্গে আমার কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু ওর বাবা-মা মেনে নেয়নি। এজন্য আর সংসার হয়নি।'
আরও পড়ুন: ভৈরবে স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধার
তনয় তার সাবেক স্ত্রীর বিষয়ে লেখেন, 'আমি বাধ্য হয়ে তাকে তালাক নোটিশ পাঠালাম। সে নিজে তাতে স্বাক্ষর করে। তারপর ফেসবুকে একটি বানোয়াট মিথ্যা গল্প সাজিয়ে প্রমাণবিহীন একটি পোস্ট করে। পরে একদিন পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেল। তারা আমার নামে মামলা করেছে। আমি তার মেয়েকে কুপিয়ে হাত কেটে দিয়েছি এবং ১০ লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছি।'
একই পোস্টে বাবা-মা, বোন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আবেগঘন বিভিন্ন কথা লিখেন তনয়।
এ ছাড়াও তার সাবেক স্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি লেখেন, 'মিম তুমি এবং তোমার পরিবার জিতে গেছ। আমার মা-বাবাকে সন্তানহারা করেছ। আমার মেয়েকে বাবা হারা করেছ। আমার বোনদের ভাই হারা করেছ। এবার তুমি শান্তিতে থাকবে আশা করি।'
তনয় তার দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তার মৃত্যুর জন্য ১১ জনকে দায়ি করে তাদের নাম উল্লেখ করেন। তারা হলেন, ফারুক গাজী, মঞ্জু গাজী ও তার স্ত্রী মিম, মিঠু গাজী ও তার স্ত্রী নিশাত, খালিদ গাজী, প্রিন্স, জসিম, মনু এবং কালাম মুন্সি।
এ দিকে তনয়ের মৃত্যুর পর অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তাই তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
যদিও ঘটনার পর তনয়ের সাবেক স্ত্রী মিমের ভাই মিঠু গাজী এক ফেসবুক পোস্টে তনয়ের অভিযোগ অস্বীকার করে লেখেন, 'আমার বোনের সঙ্গে দুপক্ষের মিউচুয়াল ডিভোর্স হয়েছে এবং আইনজীবীদের মধ্যস্থতায় সালিশ হয়েছে। আমাদের পরিবারকে হেয় করার জন্য আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। এ অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।'
এদিকে তনয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার ফেসবুক পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে স্ত্রী মীমের সঙ্গে অপর এক যুবকের একাধিক ছবিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: ঘরের দরজা ভেঙে মিলল স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তানের ঝুলন্ত মরদেহ
তনয়ের স্বজনরা জানান, ২০১৮ সালে তনয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় চাওড়া চলাভাঙ্গা গ্রামের ফারুক গাজীর মেয়ে ফারিয়া জান্নাতি মীমের। বিয়ের কয়েক বছর পর মিমের সঙ্গে রাকিব নামের অপর এক বিয়ের খবর জানতে পারে তনয়। তখন মিম রাকিবের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা অস্বীকার করলেও প্রেমের কথা স্বীকার করেন। ততদিনে তনয়-মিমের ঘরে জন্ম নেয় একটি কন্যা সন্তান।
এ বিষয়ে তনয়ের বাবা নান্নু মোল্লা বলেন, ‘শুধু শুধু আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে মিম। এ মামলায় আমার ছেলেকে কারাবাস করতে হয়। যা আমার ছেলে কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেনি। বিয়ের পরও মিম একাধিক ছেলের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছে, যা আমার ছেলে জানতে পারে এবং সেই সব ছেলেদের সঙ্গে মিমের একাধিক ছবি সে আমাদের দেখায়। তারপর আমরা পারিবারিকভাবেই মিমের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে ভেঙে দেই। আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
এ বিষয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, 'তনয় আত্মহত্যা করার ঘোষণায় এখন পর্যন্ত তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো ধরনের অভিযোগ করা হয়নি। তনয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
]]>