এদিন সূর্যোদয়ের পর মক্কা থেকে মিনায় যাত্রা করা সুন্নাত, যদিও সূর্যোদয়ের আগে রওয়ানা হওয়া সুন্নাতের খেলাফ। মিনায় জোহর, আসর, মাগরিব, এশা এবং পরদিন ফজরসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় সুন্নাত এবং সেখানে রাত যাপন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
হজের দ্বিতীয় দিন, ৯ জিলহজ, যাকে ইয়াওমুল আরাফা বলা হয়, এদিন ফজরের নামাজ মিনায় আদায় করে হাজিরা আরাফাতের ময়দানে রওয়ানা হন। আরাফাতে অবস্থান হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। দ্বিপ্রহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় থাকা ওয়াজিব, এই সময় দোয়া, ইস্তেগফার ও দরুদ পাঠে মনোনিবেশ করার নির্দেশ রয়েছে।
আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নিয়ে ইসলাম কী বলে
এরপর সূর্যাস্তের পর মাগরিব নামাজ না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে সেখানে মাগরিব ও এশার নামাজ একসাথে এশার ওয়াক্তে আদায় করা ওয়াজিব। মুজদালিফায় রাত যাপন সুন্নাত এবং সুবহে সাদিক থেকে আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা ওয়াজিব।
হজের তৃতীয় দিন, ১০ জিলহজ, হাজিদের জন্য সবচেয়ে ব্যস্ততম দিন। এদিন মুজদালিফা থেকে মিনায় এসে বড় শয়তানকে ৭টি পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব, যার উত্তম সময় সূর্যোদয় থেকে দ্বিপ্রহরের আগ পর্যন্ত। এরপর তামাত্তু ও কিরান হজকারীদের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব এবং ইফরাদ হজকারীদের জন্য মুস্তাহাব। তারপর মাথা মুন্ডানো বা চুল কাটা ওয়াজিব। এসব কাজের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও ওয়াজিব। এরপর মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ) ও যদি আগে না করে থাকেন তবে সাঈ করা ওয়াজিব। এরপর মিনায় ফিরে রাত যাপন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
১১ জিলহজ হজের চতুর্থ দিন। এদিন মিনায় তিনটি শয়তানের প্রতি ৭টি করে মোট ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়, যা ওয়াজিব। পাথর নিক্ষেপের সুন্নাত সময় দ্বিপ্রহরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। সূর্যাস্তের পর মারলে তা মাকরূহ, তবে মহিলাদের ও দুর্বলদের জন্য তা নয়। এই দিনও মিনায় রাত যাপন করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
১২ জিলহজ, হজের পঞ্চম দিনেও একই নিয়মে শয়তানদের প্রতি ২১টি পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। তবে কেউ যদি এদিন সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করেন, তাহলে ১৩ জিলহজের পাথর নিক্ষেপ তার জন্য আবশ্যক নয়। আর কেউ যদি মিনায় অবস্থান করেন, তাহলে ১৩ জিলহজেও দ্বিপ্রহরের পর তিন শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা ওয়াজিব। যারা মিকাতের বাইরে থেকে আগত, তাদের মক্কা ত্যাগের আগে বিদায়ী তাওয়াফ (তাওয়াফে বিদা) করা ওয়াজিব।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। বিমানের ১০৮টি ফ্লাইটে ৪২ হাজার ৪০৪ জন, সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮৩টি ফ্লাইটে ৩১ হাজার ৬৭৬ জন এবং ফ্লাইনাসের ৩৩টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৭৭ জন হজযাত্রী গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
এদিকে চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবে ১৭ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। সর্বশেষ মৃত্যু হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. জাহিদুল ইসলাম (৫৯)-এর, যিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ এবং একজন নারী রয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে কবুলকৃত হজের তাওফিক দিন এবং হাজিদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনুন, আমিন।
]]>