মার্কিন সেনারা আবারও কেন ভিয়েতনামে যাচ্ছেন?

৬ দিন আগে
প্রায় দুই দশকের রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে ভিয়েতনাম ছাড়েন হাজার হাজার মার্কিন সেনা। এরপর প্রায় ৫০ দশক পেরিয়ে গেছে। দেশে ফেরা সেই সেনাদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। যারা বেঁচে আছেন তাদের কেউ কেউ আবারও ভিয়েতনামে ফিরছেন।

প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের এত বছর পরও মার্কিন সেনারা কেন ভিয়েতনামে যাচ্ছেন? আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নেরই জবাব সবিস্তারে উঠে এসেছে। প্রতিবেদন মতে, মূলত গণকবরের সন্ধানে ভিয়েতনামে ফিরছেন মার্কিন সেনারা।

 

ভিয়েতনাম ‍যুদ্ধ গত শতকের একটি বহুল আলোচিত ঘটনা। যা ১৯৫৭ সালে শুরু হয়ে চলে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত। টানা ১৮ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ লাওশিয়ান ও কম্বোডিয়ান এবং ১৩ লাখ ভিয়েতনামি নিহত হন। 

 

বিপরীতে প্রায় ৫৮ হাজার আমেরিকান সেনা নিহত ও আরও দেড় লাখ সেনা আহত হন। যাদের অনেকেই এখনও যুদ্ধের সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন। 

 

যুদ্ধের প্রভাবে যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যদিয়ে তারা গিয়েছেন তার নিরাময় প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে প্রবীণ সেনারা যুদ্ধের ৫০ বছর পর তাদের নিখোঁজ কমরেডদের সমাধিস্থলগুলো শনাক্ত করতে ছুটছেন সেই যুদ্ধের ময়দানে। সেখানে তারা তাদের ‘পুরনো শত্রু’ (এখন বন্ধু) সাবেক ভিয়েতনামি সেনাদের সাথে মিলেমিশে কাজ করেন।

 

আরও পড়ুন: সিরিয়ায় মার্কিন সেনা দ্বিগুণ করা হয়েছে, জানাল পেন্টাগন

 

সবশেষ ২০২২ সালের আগস্ট মাসে চার মার্কিন সেনা ভিয়েতনাম যান। তাদের বয়স এখন ৭০-এর কোঠায়। ভিয়েতনামের দক্ষিণ-মধ্য উপকূলে অবস্থিত প্রায় ৫ লাখ অধিবাসীর শহর এবং বিন দিন প্রদেশের রাজধানী কুই নহন।

 

ওই শহরের বাইরে ছোট এক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন চার প্রবীণ মার্কিন সেনা। কুই নহনের দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ অরণ্য আর মনোমুগ্ধকর গ্রীষ্মমন্ডলীয় সৈকত দেখলে কেউ মানতে চাইবে না যে, এই অঞ্চলেই ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের সূচনা হয়েছিল।

 

কিছুক্ষণ পরই চার মার্কিন সেনা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন। সেখানে তাদের স্বাগত জানান একজন ইউনিফর্ম পরিহিত বয়স্ক ভিয়েতনামি। তিনি মেজর ডাং হা থুই। যিনি এখন থেকে পাঁচ দশক আগে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন।

 

অর্ধ শতাব্দী আগে তারা একে অপরের ওপর গুলি চালাতেন। আর সেদিন তারা পুরনো বন্ধুর মতো একে অপরের সাথে হ্যান্ডশেক করেন, করেন হাসি বিনিময়। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব হল?

 

আল জাজিরার প্রতিবেদন বলছে, এক ও অভিন্ন লক্ষ্যই তাদেরকে আবারও এক জায়গায় মিলিত করেছে। মেজর থুই বহুদিন ধরে তার নিখোঁজ ভিয়েতনামি সহযোদ্ধাদের দেহাবশেষ খুঁজে ফিরছিলেন। যারা যুদ্ধের সময় নিখোঁজ অথবা নিহত হয়েছিলেন।

 

আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ

 

তাদের সন্ধানে এভাবে ২০ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন থুই। সফল না হওয়ায় অবশেষে তার সাহায্যে এগিয়ে আসেন এই চার মার্কিন সেনা। কারণ তারাই শুধু জানেন, তার সেই সহযোদ্ধাদের কবর কোথায়। কারণ তাদের কবরস্থ করেছিলেন তারাই।

 

বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে একদল সাংবাদিক নিয়ে পাঁচজন একটা শাটল ট্রেনে চড়ে বসেন। ট্রেনটি তাদের সবাইকে কিম সন উপত্যকার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল জুয়ান সন হিলে নিয়ে যায়। পঞ্চাশ বছর আগে এখানেই মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটি ছিল। ছিল এক নৃশংস যুদ্ধের স্থান। এখানেই একটি গণকবর অবস্থিত যেখানে ৬০ জনের দেহাবশেষ রয়েছে।  

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন