জিন আরবি শব্দ। এর বাংলা অর্থ হচ্ছে- যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী অথবা অনেক দূরবর্তী। আর ভূত বাংলা শব্দ। এর আরবি প্রতিশব্দ হলো ‘ইফরিত’। ‘ইফরিত’ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘এক শক্তিশালী জিন (ইফরিত) বলল, আপনি আপনার (সুলাইমান (আ.)) স্থান থেকে ওঠার আগেই আমি তা (বিলকিসের সিংহাসন) এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।’ (সুরা নামল, আয়াত: ৩৯)।
আরও পড়ুন: কত বছর পর্যন্ত শিশুরা মায়ের দুধ পান করতে পারবে?
এ আয়াতে ‘ইফরিতুম মিনাল জিন’ অর্থাৎ জিনদের মধ্য থেকে এক ‘ইফরিত’ বা ভূত কথাটি এসেছে। তাফসিরবিদরা বলেছেন, জিনদের মধ্যে যারা অবাধ্য, বেপরোয়া, দুষ্ট প্রকৃতির ও শক্তিশালী হয়ে থাকে, তাদের ‘ইফরিত’ বলা হয়। (আল মুফরাদাত ফি গারিবিল কোরআন)। এরাই মানুষের ওপর ভর করে।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘এর আগে (আদি মানব সৃষ্টির আগে) আমি জিন সৃষ্টি করেছি অত্যুষ্ণ আগুন (উত্তপ্ত অগ্নিশিখা) থেকে।’ (সুরা হিজর, আয়াত: ২৭)
আলোচ্য এ আয়াতে জিন জাতির আদি পিতার সৃষ্টি বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ জিন জাতির আদি পিতাকে উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে সৃষ্টি করেছেন। পরে জিনদের বংশবিস্তার হতে থাকে।
আরও পড়ুন: অতিবৃষ্টি ও বজ্রপাত থেকে বাঁচতে নবীজি যে দোয়া শিখিয়েছেন
জিন জাতি সম্পর্কে বহু কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে। আধুনিকমনস্ক অনেক মানুষের প্রশ্ন, ‘সত্যিই কি জিন-ভূত মানুষের ওপর ভর করতে পারে?’ এর উত্তর হলো, অবশ্যই জিন মানুষকে ভর করতে পারে। মানুষের ওপর ভর করতে পারে। যার ওপর আসর করে, তাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে। এমনকি ওই ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করতে পারে।
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার ২৭৫ নম্বর আয়াতে মানুষের ওপর জিন জাতির ভর সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ یَاۡكُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا كَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ অর্থ: যারা সুদ খায় তারা (কিয়ামতের দিন) এমন ব্যক্তির মতো দাঁড়াবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দিয়েছে।
জিন মানুষের ওপর ভর করার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হিসেবে তাফসিরকারকরা এ আয়াতটি উল্লেখ করেন। শয়তানের ভরে মানুষ মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে- এ আয়াত থেকে বিষয়টি নিশ্চিত বোঝা যায়। (তাফসিরে কুরতুবি: ৩/৩৫৫; তাফসিরে তাবারি: ৩/১০১)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘শয়তান আদম সন্তানের শরীরে প্রবাহিত হয়, যেমন রক্ত শরীরে প্রবাহিত।’ (মুসলিম: ২১৭৫)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন- যার ওপর জিনের আসর ছিল। নবীজি ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন,
ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো, ও আল্লাহর শত্রু, বের হয়ে আসো। তারপর ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। (ইবনে মাজাহ: ৩৫৪৮)
এর মাধ্যমে পরিস্কার যে, খারাপ বা দুষ্টু জিন মানুষের ওপর আসর করতে পারে।
]]>