সহজেই বিদেশে উচ্চশিক্ষা-এমন প্রলোভন দেখিয়ে ১৯৯৩ সালে যাত্রা শুরু করে বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কস। বিদেশে পাঠানোর নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ ছিলো বিএসবি নিয়মিত ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানের পর পাওনা টাকার দাবিতে রাজধানীর গুলশানে প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
সেই বিক্ষোভের পর থেকেই লাপাত্তা পুরো প্রতিষ্ঠান। বারিধারার নিজ বাসা থেকে রাতারাতি পরিবার নিয়ে উধাও হয়ে যান প্রতিষ্ঠানের মালিক খায়রুল বাশার। স্থানীয়রা বলছেন, চলে যাওয়ার পর থেকে আর কোনো হদিস নেই পরিবারটির।
আরও পড়ুন: পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির অর্থ কেন ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশ?
পরে অনুসন্ধানে নেমে সিআইডি জানতে পারে ১৪১ জন শিক্ষার্থীর প্রায় ১৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিএসবি। মামলা করা হয় মালিক খায়রুল বাশার ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ অজ্ঞাত ৫ জনের নামে। থলের বেড়াল বেরিয়ে আসে সিআইডির তদন্তে। জানা যায়, গত ৩০ বছরে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়েছেন বাশার। দৃশ্যমান সম্পদের হিসেবে মেলে ৪৭ কোটি টাকার। বারিধারার তিনটি ফ্ল্যাটও ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিএসবি গ্লোবালের মালিক খায়রুল বাশার। আর সেই টাকায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদ। সম্প্রতি এমনই একটি ১২২ শতাংশের প্লট ক্রোক করেছে আদালত।
বিএসবি গ্রুপের পাশাপাশি রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধেও তদন্তে নামে সিআইডি। এক জমি দুই দফায় ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে রংধনু গ্রুপ। গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা রংধনু বিল্ডার্স নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্বাচলে পুলিশ অফিসার্স বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছে সাড়ে ৭ একর জমি বিক্রি করে।
সেই একই জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছেও বিক্রি করে হাতিয়ে নেয় ৫৭ কোটি টাকা। এখানেই শেষ নয়, ওই একই জমি আবার তিনটি ব্যাংককে দেখিয়ে মোট ৮৭০ কোটি টাকা ঋণ নেয় তারা। সবশেষে সব টাকাই পাচার করে বিদেশে। পরে মামলা হয় রংধনু গ্রুপের বিরুদ্ধে। মামলার পর আদালতের মাধ্যমে ক্রোক হয় রাজধানীর বনানীর হোটেল ইউনিক রিজেন্সি ও যমুনা ফিউচার পার্কের ১ লাখ বর্গফুটের বাণিজ্যিক স্পেস। রংধনুর রফিকুল ইসলামের ১৩ ব্যাংক হিসাবের ১৭ কোটি টাকাও ফ্রিজ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বিগত সরকারের প্রভাবশালী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার, সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, সাবেক মন্ত্রী মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল, সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের আস্থা ভজন তৌফিকা করিমসহ ২১ জনের বিরুদ্ধেও তদন্ত করে সিআইডি। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানিয়েছেন, আগের সরকারের সময় যারা প্রভাবশালী ছিলেন এবং সমাজে উচ্চস্তরের প্রতিপত্তি রাখতেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই সিআইডিতে মামলা চলমান রয়েছে। অনেকের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করছে সিআইডি।’
সিআইডি বলছে, গত এক বছরের অনুসন্ধানে বিএসবি, রংধনু, ইউনিক, অরবিটালস ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, অ্যাপোলো, কানচুর ও অটামলুপ এপারেলস, আহমদীয়া মাল্টিপারপাসসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৭ হাজার ৪৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জিত হয়েছে। এসবের মধ্যে ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে সংস্থাটি। একই সঙ্গে বিভিন্ন হিসাবে ফ্রিজ করা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে তৎপর সরকার, নতুন পাচার রোধে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ
জসীম উদ্দিন খান আরও বলেন, মানিলন্ডারিংসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ চলমান রয়েছে। পাইপলাইনে আরও অনেক মামলা রয়েছে। যারা অবৈধ অর্থের লেনদেন ও পাচারে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরই মধ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানাচ্ছে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের মাত্র এক শতাংশই দেশে ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছে। সংস্থাটির মতে, শুধুমাত্র তদন্তই নয়, অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের তথ্য খুঁজে বের করা এবং পাচার রোধেও জোর দিতে হবে মানিলন্ডারিং মামলা তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “শুধু কূটনৈতিক বা পারস্পরিক আইনি সহায়তা নয়, কারিগরি সহায়তাও অপরিহার্য। তাই পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা এবং একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের লেনদেন প্রতিরোধে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।’
টিআইবি আরও বলছে, দেশে-বিদেশে খোঁজ মেলা সম্পদগুলো দ্রুত বাজেয়াপ্ত করতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে সব পক্ষকে।
]]>
১ দিন আগে
১








Bengali (BD) ·
English (US) ·