সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার ১০১ নম্বর দত্তকেন্দুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক শিপ্রা বৈরাগী। দাফতরিক ব্যস্ততার কারণে শ্রেণিকক্ষে সময় দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে তার জন্য।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিপ্রা বৈরাগী বলেন, ‘একজন সহকারী শিক্ষকের পক্ষে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করা খুব কঠিন। একদিকে দাফতরিক কাজ, অন্যদিকে পাঠদানের কাজ। এই দুটি একসঙ্গে করতেই নাজুক অবস্থা হয়। তাই দ্রুত প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুন: শিক্ষক / শুরু হলো ১ লাখের বেশি শূন্যপদে নিয়োগের আবেদন
একই চিত্র ১৭৫ নম্বর কলাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও। প্রধান শিক্ষক বদলি হওয়ার পর দায়িত্বে আছেন সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান। তিনিও একই সঙ্গে প্রশাসনিক ও পাঠদানের কাজ সামলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। মশিউর রহমান বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক অন্যত্র চলে যাবার পর এই পদের দায়িত্ব পালন করলেও কঠিন অবস্থা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পর অন্য কাজ করা খুবই কঠিন হয়। এর ঘাটতি পূরণ প্রধান শিক্ষকই পারেন, তাই এই পদটি দ্রুত নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।’
শহরের ১৩৯ নম্বর পুলিশ লাইনস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫০০ জন হলেও শিক্ষক মাত্র ৬ জন। নিয়ম অনুযায়ী যেখানে ১২ জন থাকার কথা, সেখানে শিক্ষক সংকটে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৫০০ জন হলেও শিক্ষক মাত্র ৬ জন। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। শিক্ষক সংকটে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয় বাকি শিক্ষকদের। বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি। আমরা দাবি করছি শিক্ষার্থীদের তুলনায় ১২ জন শিক্ষক দ্রুত নিয়োগ দেয়া হোক।’
প্রত্যয় দেব নামে এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট থাকায় পড়ালেখায় কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। আমরা চাই পরিপূর্ণভাবে শিক্ষক থাকুক। তাহলে আমরা আরও বেশি করে পাঠদান করতে পারবো। পড়ালেখার মানও ভাল হবে।’
আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তীব্র শিক্ষক সংকট, ব্যাহত পাঠদান
আরেক শিক্ষার্থী অনন্যা জানায়, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। আমরা চাই হেডস্যার আসুক। তাহলে আমাদের দিক নির্দেশনাও ঠিকঠাক হবে। পড়ালেখা ও রেজাল্টও ভাল হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৭১৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২২৪টি প্রধান শিক্ষক ও ২০৪টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য। ২০১৩ সালের পর থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে, পদোন্নতির বিষয়ে মামলা জটিলতায় আটকে আছে বহু সহকারী শিক্ষকের প্রক্রিয়া।
মাদারীপুর জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মনজুর রহমান জানান, ‘শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে শিক্ষা দফতরে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেয় অধিদফতর। তাই জেলা অফিস থেকে সেটি শুধু জানানোই যায়, এর বাইরে আমাদের কিছুই করার নেই। আর সহকারী শিক্ষকদের সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই তেমন বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ খালি নেই।’
]]>