মাটির সঙ্গে অলিখিত অঙ্গীকার: জিয়াউর রহমানের জাতীয়তাবাদে পরিবেশ ও অর্থনৈতিক মুক্তি

২ সপ্তাহ আগে
বাংলাদেশ আজ সম্ভাবনার দেশ। ইতিহাসের দুঃখ-দুর্দশা পেরিয়েও আমরা এখনও খুঁজছি— কীভাবে অগ্রগতি এবং প্রকৃতির সংরক্ষণ একসাথে সম্ভব। আমাদের জাতির গল্পের মূল চাবিকাঠি হলো এক বিস্মৃত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার— মাটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক।

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেই বন্ধনকে পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন। তার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার নয়, বরং এক স্বনির্ভর জাতি গঠনের চিন্তা। যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি একসাথে টিকে থাকবে।


মৃৎশিল্পীর শিক্ষা: আত্মনির্ভরতার অর্থ


একজন কুমার যখন মাটির হাঁড়ি বানান, তিনি জানেন— একদিন সেটি আবার মাটিতে ফিরে যাবে। এটি কেবল শিল্প নয়, এক প্রাচীন পরিবেশদর্শন। এখানে কিছুই অপচয় হয় না; সৃষ্টি নিজেই প্রকৃতিকে সম্মান করে।


আজ আমরা মাটির সেই শিক্ষা ভুলে গেছি। প্লাস্টিক, ই-বর্জ্য, বিষাক্ত বর্জ্য— সবই পরিবেশকে দূষিত করছে। কুমারের দর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয়— সম্পদকে শোষণ নয়, শ্রদ্ধা করতে হয়।


জিয়াউর রহমানের “স্বনির্ভর বাংলাদেশ” নীতিও একই শিক্ষাকে প্রতিফলিত করে। তিনি চেয়েছিলেন, প্রতিটি মানুষ নিজের জ্ঞান ও স্থানীয় সম্পদ দিয়ে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।


নকশিকাঁথা: সংহতি, সৃজনশীলতা ও অর্থনীতি


পুরোনো কাপড় জুড়ে নতুন জীবন দেওয়া—আমাদের সংস্কৃতির এক অমূল্য নিদর্শন। এটি কেবল পুনর্ব্যবহার নয়; পারিবারিক সংহতি ও মানবিক পুঁজির গল্পও বয়ে আনে।


প্রতিটি সেলাই শেখায় মিতব্যয়িতা, ধৈর্য ও দৃঢ়তা। যেমন ৭ নভেম্বরের সৈনিক ও সাধারণ মানুষ একত্র হয়ে দেশের মর্যাদা রক্ষা করেছিল। নকশিকাঁথা আমাদের দেখায়— সৃজনশীলতা ও অর্থনীতি একসাথে টেকসই উন্নয়নের পথ দেখাতে পারে।


খাল খনন: প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান


জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের উদাহরণ। এটি কৃষিকে প্রাণ দান করেছিল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং সেচ ব্যবস্থায় উন্নয়ন এনেছিল— সবই স্থানীয় মানুষের অংশগ্রহণে।


গ্রামীণ কৃষকরা আকাশ, মেঘ ও মাটির ভাষা পড়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতেন। এটি প্রমাণ করে, বিদেশি সাহায্য বা প্রযুক্তি ছাড়াই স্থানীয় জ্ঞান ও ঐক্যের মাধ্যমে উন্নয়ন সম্ভব।

 

আরও পড়ুন: প্রযুক্তিনির্ভর নেতৃত্বের এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের নাম তারেক রহমান


ঐতিহ্য থেকে ভবিষ্যৎ: টেকসই বাংলাদেশ


বিশ্ব যখন লড়ছে জলবায়ু পরিবর্তন, সম্পদের ঘাটতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তখন বাংলাদেশ তার নিজস্ব ইতিহাস থেকে দিশা নিতে পারে।


জিয়াউর রহমানের চিন্তার মূলে ছিল আত্মনির্ভরতা, পরিবেশের ভারসাম্য এবং স্থানীয় ক্ষমতায়ন। এই ধারণা আজকের টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।


মাটির সঙ্গে এই অলিখিত অঙ্গীকার আমাদের শেখায়— গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।


শেষ কথা: কথায় নয়, কাজে

 

আমাদের পূর্বপুরুষেরা প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে বাঁচতেন। তাদের জ্ঞান ইতিহাস নয়, বরং আগামী দিনের দিশা।


চলুন, সেই উত্তরাধিকারকে বাস্তবে রূপ দিই— পরিবেশ রক্ষা করি, মানুষকে ক্ষমতায়িত করি এবং পূর্ণ করি এক স্বাধীন, অংশগ্রহণমূলক ও স্বনির্ভর বাংলাদেশের অঙ্গীকার।

 

লেখক: 
সহযোগী অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়;
গবেষক, ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া।
 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন