মাটি-পানি ও বায়ু দূষণে হুমকির মুখে কুষ্টিয়ার কৃষি ও জীববৈচিত্র্য

৩ সপ্তাহ আগে
কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন শিল্প কারখানা ও অসচেতন নাগরিকদের কার্যক্রমের কারণে পানি, বাতাস ও মাটি প্রতিনিয়ত দূষণের শিকার হচ্ছে। এতে পরিবেশ ও কৃষি জীববৈচিত্র্য গুরুতর ঝুঁকিতে পড়েছে।

কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট বড় ৬টি নদী। এর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, হিশনা, কালিগঙ্গা নদী ও কুমারনদ। তবে গড়াই ও কালিগঙ্গা নদী সবচেয়ে বেশি দূষণের কবলে পড়েছে।

 

জেলার ১৫টি বড় শিল্প কারখানার মধ্যে ১৩টির ব্যবহৃত বিষাক্ত পানি বাধাহীনভাবে গড়াই ও কালিগঙ্গা নদীতে মিশছে। কুষ্টিয়া, কুমারখালী ও খোকসা পৌরসভার ময়লা পানি ফেলার একমাত্র স্থান হলো গড়াই নদী। বিশেষ করে কুমারখালীর কাপড়ের ডাইং ফ্যাক্টরির দূষিত পানির শেষ আশ্রয়স্থল এই গড়াই নদী।

 

পানির দূষণের কারণে নদীতে দেশি মাছ দেখা দুষ্কর হয়ে গেছে, পাখি ও অন্যান্য প্রাণী কুলও লোপ পাচ্ছে। মাছের অভাবে গড়াই পাড়ের জেলেরা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া দূষিত পানির কারণে কৃষিতে নদীর পানি ব্যবহারও কমে গেছে।

 

এদিকে জেলায় বাড়ছে বায়ু দূষণের প্রবণতাও। জেলার মোট ১৯১টি ইট ভাটা তালিকাভুক্ত থাকলেও কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। ইট ভাটাগুলো প্রচুর দূষণ সৃষ্টি করছে। জেলার রাইস মিলগুলোও প্রতিদিন কালো ধোঁয়া ছড়াচ্ছে। এ ছাড়া দুটি বৃহৎ তামাক কোম্পানির প্রসেসিং প্লান্ট এবং ৩৮টি মাঝারি শিল্প, বিশেষ করে প্লাইউড মিলগুলোও বায়ু দূষণ করছে।

 

আরও পড়ুন: জলবায়ু পরিবর্তনের ছোবলে উপকূল, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীবিকার সংকটে বাসিন্দারা

 

জেলার মিরপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত লাভের আশায় কৃষকরা তামাক চাষে ঝুঁকছেন। তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া ইট ভাটাগুলো কৃষকের জমির উপরিভাগ চড়া দাম দিয়ে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। সচেতনতার অভাবে কৃষকেরা কৃষি জমিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছে, যার ফলে মাটি ক্রমশ দূষিত হচ্ছে।

 

জেলার বাসিন্দারা আশঙ্কা করছেন, দূষণরোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পানি, বাতাস ও মাটির দূষণ ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার নেবে। তারা বলছেন, দ্রুত পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে প্রশাসনসহ সবাইকে সচেতন হতে হবে।

 

কুষ্টিয়ার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ইমদাদুর হক জানান, জেলায় পানি, বাতাস ও মাটির দূষণ পরিমাপের যন্ত্র নেই। তবে পরিবেশ রক্ষা ও দূষণ রোধে মিল ও কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো এবং সাধারণ কৃষক ও মিল মালিকদের পরামর্শ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দূষণ কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

 

জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহম্মদ আরেফিন বলেন, ‘পরিবেশ বান্ধব মিল ও কারখানা গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা দেয়া হবে। যারা পরিবেশ রক্ষায় ব্যর্থ হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন