আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই কক্সবাজারকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
কিন্তু সরেজমিনে দেখা যায়, সাগর এখনো উত্তাল রয়েছে। জোয়ারের সময় ঢেউয়ের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকফুট বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আছড়ে পড়ছে। আর বাঁকখালী নদীতে দেখা যায় নোঙর করা রয়েছে বড় বড় ট্রলার। এসব ট্রলার ৩০০ কিলোমিটার সাগর পাড়ি দিয়ে আহরণ করতে যায় ইলিশ। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাগরে ইলিশ শিকারে যেতে সম্ভব হচ্ছে না। তাই অনেক জেলে অবস্থান করছে নোঙর করা ট্রলারে। আবার অনেকেই বসে রয়েছেন চায়ের দোকানে। জেলেরা বলছেন, দুঃসময়ের যেন শেষ নেই তাদের।
৬নং ঘাটে নোঙর করা ট্রলার এফবি আল্লাহ দানের জেলে মো. ইসমাঈল বলেন, এখন তো আমাদের খুব খারাপ সময় যাচ্ছে। যখন মাছ ধরার মৌসুম ছিল তখন নিষেধাজ্ঞার কারণে মাছ ধরতে পারেনি। এখন নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে কিন্তু বর্ষা মৌসুম। হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়, সংকেত দেয়া হয় যার কারণে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারছি না। এখন আমরা জেলেরা খুবই আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।
একই ঘাটের আরেক জেলে বশির আহমদ বলেন, মূলত গভীর সাগরে গিয়ে ইলিশ ধরতে হয়। এই গভীর সাগরে যেতে একদিন ট্রলার চালাতে হয়। কিন্তু আবহাওয়া তো খারাপ, এখন তো গভীর সাগরে ইলিশ শিকারে যাওয়া যাচ্ছে না। তাই ট্রলার নোঙর করা রয়েছে আর আমরা জেলেরা কখন আবহাওয়া ভাল হবে, ট্রলার নিয়ে সাগরে যাব এই অপেক্ষা আছি।
এদিকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী কিংবা শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখর থাকলেও এখন মাছ শূন্য পল্টুনে ব্যবসায়ীরাও পার করছেন বেকার সময়। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বলছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ না থাকায় রাজস্ব আদায় হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: বাজেটে মৎস্য আহরণের লক্ষ্যমাত্রা কত?
মৎস্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষ কিন্তু মাছ নেই অবতরণ কেন্দ্রে। কারণ সাগরে যেতে পারছে না ট্রলার। তাই ব্যবসা নেই, বসে বসে দিন গুনছি কখন আবহাওয়া ভাল হবে, জেলেরা সাগরে যাবে আর অবতরণ কেন্দ্রে মাছে ভরে যাবে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১২ জুন ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। কিন্তু এর পরপরই সাগর উত্তাল রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, চকরিয়া, পেকুয়া ও কুতুবদিয়ায় মাছ ধরার ছোটবড় ট্রলার আছে ৬ হাজার। এর মধ্যে ৫ হাজার বড় ট্রলার সাগরে নামতে পারছে না। এসব ট্রলারের লাখখানেক জেলে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন।
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস এমনিতে সাগর উত্তাল থাকে। উপকূলের জেলেদের কাছে এ সময়টা ‘প্রাকৃতিক বন্ধ’। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জেলেরা ইলিশ ধরতে সাগরে নেমে পড়বে।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং সহকারী মো. গোলাম রব্বানী বলেন, গেলো ৮ দিনে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সরবরাহ হয়েছে ৬ মেট্রিক টন ইলিশ ও ৮৬ মেট্রিক টন অন্যান্য সামুদ্রিক মাছ। কিন্তু গত দুইদিন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কোন মাছ নেই। যার কারণে কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ও হচ্ছে না।
কক্সবাজারে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান রয়েছে ৬ হাজার ৭৮৪টি, আর নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার।