সবশেষ গত এপ্রিলেও মহাসড়ক ও ফুটপাত থেকে ইজারা আদায় নিয়েই ইজারাদার ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ইজারা আদায় নিয়ে এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। তবে জুলাইয়ে ছাত্র জনতার আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর তা যেনো নতুন রুপে ফিরেছে। ফলাফল, জনদুর্ভোগ বাড়ানোর পাশাপাশি যার প্রভাব পরেছে স্থানীয় রাজনীতিতেও।
স্থানীয় হকারদের দাবি বিএনপি নেতা কাজল ফকির ও তার দলবল নিয়ে এই ইজারার নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিদিন বিক্রি হোক কিংবা না হোক ইজারা দিতেই হয়।
তবে গাজীপুর জেলা বিএনপি’র ১নং যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, ‘যারা ইজারা নেয় তারা ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্যে ইজারা নেয়। ইজারাদারদের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির ইমেজ নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছে।’
আরও পড়ুন: ৫ আগস্টের পর ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পরিবহনে চাঁদাবাজি করছে কারা?
দেশের আইনে সড়ক কিংবা ফুটপাতের দোকান থেকে অর্থ আদায়কে চাঁদাবাজি বলা হলেও গাজীপুরে সেটি বৈধ। বৈধতার সেই সিলমোহর অবশ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ নিজেই। এমন বাস্তবতায়, শত ভোগান্তিতেও যেনো কিছুই করার নেই নগরবাসীর।
মহাসড়কে দোকান বসিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির পরও কেন নিশ্চুপ প্রশাসন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। কাগজে কলমে জায়গার মালিক সড়ক বিভাগ হলেও তা কোটি টাকায় ইজারা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যার সুযোগ নিচ্ছেন সড়কের মালিক বনে যাওয়া ইজারাদাররা।
গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মাওনা চৌরাস্তার ইজারাদার কাজল ফকির বলেন, ‘আমাকে প্রশাসন সড়ক আর ফুটপাত থেকে ইজারা নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে। ৬৫ লাখ টাকা দিয়ে এই জায়গার ইজারা নিয়েছি। আমি বৈধভাবেই ইজারা নিচ্ছি।’
অথচ সময় সংবাদের হাতে আসা নথি বলছে, সড়কের জমি ইজারা দেয়ার আগেই জনদুর্ভোগ বিবেচনায় তাতে বাধা দিয়েছে সড়ক বিভাগ। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আপত্তি জানানো হলে ইজারা বাতিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজীব আহমেদ বলেন, ‘বৈধভাবেই এসব জায়গায় ইজারা দেয়া হয়েছে যা গেলো ২ যুগ ধরেই চলছে। তবে মহাসড়ক আর ফুটপাত দখল করে বাজার বসানো কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা এখন স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করছি, তারা আপত্তি জানানলে ইজারা বাতিলের সুযোগ আছে।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ কায়সার খসরু সময় সংবাদকে বলেন, ‘জায়গার মালিক সড়ক বিভাগ আর ইজারা দেয়ার দায়িত্বে আছে পৌরসভা (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে ইউএনও)। আমরা দুই পক্ষের সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করছি।’
আরও পড়ুন: শেখ হেলাল ও তন্ময়ের বিরুদ্ধে ২০০ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা
জনভোগান্তি বিবেচনা না করেই সড়ক ইজারা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নাগরিক সমাজ সুশাসনের জন্য নাগরিক গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, ‘বিগত সরকাররের আমলে ঘটা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধেই আমাদের ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান। বর্তমান সময়েও যদি এমন অনিয়ম চলতে থাকে তবে এত প্রাণ দিতে হলো কে? শিগগিরই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের প্রত্যাশা করি।
গুরুত্বপূর্ণ দুই দপ্তরের এমন কাণ্ডে দোটানায় পরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। ক্যামেরায় কথা না বললেও পুলিশ সুপার জানান, সড়ক দখলমুক্ত করতে শিগগিরই কঠোর অবস্থানে যাবে পুলিশ।