অসংখ্য নবী, রসুল, সাহাবি, তাবেয়িদের পুণ্যভূমি মসজিদুল আকসা। পবিত্র এ মসজিদ খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ৯৫৭ সালে প্রথম নির্মাণ হয়। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় ১০০৪ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন যুগে এর সংস্কার হতে থাকে। ঐতিহাসিক এ মসজিদটি ৩৫ একর জমির ওপর নির্মিত। মসজিদের নির্মাণশৈলী মুসলিম ঐতিহ্যের সাক্ষ্য বহন করে।
ফিলিস্তিন বা আল-আকসা মসজিদ নিয়ে কিছু বললে বা লিখলে অধিকাংশ মানুষ সোনালি রঙের গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের ছবিটি ব্যবহার করেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, মসজিদুল আকসা মানেই সোনালি রঙের গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ। সঠিক ইতিহাস না জানার কারণে অনেক পাঠক আবার এ নিয়ে অহেতুক তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হন। আজকে জানবো মূল মসজিদুল আকসা কোনটি?
এর উত্তর হলো- অনেকগুলো স্থাপনা নিয়ে পুরো জায়গাটার নামই আল আকসা। কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রকের অবস্থান আল-আকসার অভ্যন্তরে। মসজিদুল আকসা এবং ইসলামি স্থাপত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক।
মক্কার পবিত্র মসজিদে হারাম শুধুমাত্র কাবার নাম নয়। এর অভ্যন্তরে রয়েছে কাবা প্রাঙ্গণ, হাজরে আসওয়াদ, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া পাহাড়, জমজম কূপ ইত্যাদি। তদ্রূপ আল আকসার অভ্যন্তরেও মসজিদ, গম্বুজ, আঙিনা, মিহরাব, মিম্বার, কূপসহ ২০০টি ছোট বড় স্থাপনা রয়েছে। এর মধ্যে কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রকও রয়েছে।
এটি আল আকসার মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। একে মারওয়ানি মসজিদও বলা হয়। সুতরাং কেউ সেখানে নামাজ পড়লে মসজিদে আকসায় নামাজ পড়েছেন বলে বিবেচিত হবেন। এমনকি আল আকসার বিশাল আঙিনায় হাজারো মানুষকে নামাজ পড়তে দেখা যায়। তারাও মসজিদে আকসায় নামাজ পড়েছেন বলেই গণ্য হবেন।

মসজিদে আল-আকসা-এর ইতিহাস
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম,
হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে নির্মিত প্রথম মসজিদ কোনটি? প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মসজিদুল হারাম। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোনটি? প্রতিউত্তরে প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর হলো মসজিদুল আকসা। এরপর আমি জানতে চাইলাম যে, উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের? তিনি বললেন ৪০ বছরের ব্যবধান। (বুখারি, হাদিস : ৩১১৫)
মুসলমানদের প্রথম কিবলা আল-আকসা সর্বপ্রথম ফেরেশতাদের মাধ্যমে অথবা আদম (আ.)-এর কোনো সন্তানের মাধ্যমে নির্মিত হয়। উপর্যুক্ত হাদিস থেকে জানা যায়, পবিত্র মসজিদ কাবা শরিফ নির্মাণের চল্লিশ বছর পরে নির্মিত হয়। হজরত ইয়াকুব (আ.) কে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিলে তিনি তা পুনর্নির্মাণ করেন। তার প্রায় হাজার বছর পরে হজরত দাউদ (আ.) পুনর্নির্মাণ শুরু করেন। হজরত দাউদ (আ.) নির্মাণ শেষ করতে পারেননি। তার ছেলে হজরত সুলাইমান (আ.)-এর হাতে তার সংস্কার সমাপ্ত হয়।
আরও পড়ুন: জিন জাতি ‘আল-আকসা মসজিদ’ নির্মাণ করে যেভাবে
হজরত সুলাইমান (আ.) ছিলেন একজন নবী। পৃথিবীর ইতিহাসে সেরা প্রভাবশালী বাদশাহদের একজন। তার রাজত্বকাল ছিল প্রায় ৯৭০ থেকে ৯৩০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী। তিনি ছিলেন হজরত দাউদ (আ.)-এর ছেলে। হজরত সুলাইমান (আ.) আল-আকসা ঘিরে জেরুজালেম নগরী প্রতিষ্ঠা করেন।
মহান আল্লাহ তাকে এমন নেয়ামত দিয়েছেন যা অন্য কোনো নবীকে দেননি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন,
আমি দাউদের জন্য সুলাইমানকে দান করেছিলাম, সে কতই না উত্তম বান্দা। অবশ্যই সে ছিল আমার প্রতি প্রত্যাবর্তনশীল। (সুরা সদ, আয়াত: ৩০)

কুব্বাতুস সাখরা বা ডোম অব দ্য রক-এর ইতিহাস
কুব্বাতুস সাখরা অর্থ পাথরের গম্বুজ। ৬৯১ সালে (৭২ হিজরিতে) উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান অষ্টকোণ বিশিষ্ট এই সোনালি গম্বুজটি (ডোম অব দ্য রক) নির্মাণ করেন। ১৯৯৩ সালে জর্ডানের বাদশাহ হুসাইন তার বাড়ি বিক্রি করে পাওয়া ৮.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে ৮০ কেজি সোনা কিনে তা দান করে দেন ডোম অফ দ্য রকের জন্য। সেই স্বর্ণের প্রলেপের কারণেই গম্বুজটি জ্বলজ্বল করে।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাতে এখান থেকে মহাকাশ গমন করেন। এজন্য ধর্মীয় দিক দিয়ে স্থানটির আলাদা মর্যাদা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভের নামে লুটপাট নিয়ে যা লিখলেন আজহারী
এ মসজিদ নির্মাণ করতে ১০ বছর (৮৬-৯৬ হি.) সময় লেগেছিল। এর সাতটি আঙিনা ও বারান্দা রয়েছে। এটি একাধিকবার পুনর্নির্মাণের প্রয়োজন হয়েছিল। যেমন ১৩০ হিজরি ও ৪২৫ হিজরির ভূমিকম্পের পর।