জানা যায়, পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় যত্রতত্র ফেলা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করা ও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় বেড়েছে মশার উপদ্রব।
তবে পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, মশা নিধনের লক্ষ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান পরিচালনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ২৮ দশমিক ২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। পৌরসভার অধিকাংশ সড়কের পাশে উন্মুক্ত ড্রেন। ময়লা আবর্জনা পূর্ণ পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। এই সব পানির উৎস থেকে পৌর এলাকাসহ আশপাশে ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষতিকারক এ কীট। ফলে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এখন যেন মশার স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: ৯ কোটি টাকা ব্যয়েও মিলছে না মশা থেকে মুক্তি!
দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ লক্ষ্মীপুর পৌরবাসী। পৌরসভার প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন লাইনের অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে ঢাকনা খোলা। এসব খোলা ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলায়, তা পচে এক ধারে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, অন্য ধারে প্রজনন হচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণুবাহী মশার। আর এ মশার অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। দিনে বেলায়ও দরজা-জানালা বন্ধ করে রেহাই পাচ্ছেন না তারা।

স্থানীয়রা জানান, পৌর এলাকার যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা এবং পরিকল্পিত ড্রনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। দিনের বেলায়ও অফিস-আদালত ও বাসাবাড়িতে কয়েল জ্বালিয়েও রক্ষা হচ্ছে না তাদের।
পৌর বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মিত পৌরকর পরিশোধ করলেও মশা নিধক স্প্রে ও যত্রতত্র ফেলা ময়লা আবর্জনা ও ড্রেন পরিষ্কার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি বেড়েছে তাদের।
আরও পড়ুন: মশা মারতে খরচ ৬ কোটি, ফলাফল শূন্য!
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাজল বলেন, ‘মশা এতো বেশি, মশার জ্বালায় আমরা এখন অতিষ্ঠ। শুধু বাহিরে নয়, এখন ঘরে থাকতেও আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে।’
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা হোসেন আহম্মেদ বলেন, ‘মশার জ্বালায় বসাই যায় না। যেখানেই যাই এতো মশা বেড়েছে এখন থাকাটাই দায়। অথচ এই বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরই নেই। মশার কামড়ে অনেকেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
পৌর শহরের শাখারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা কমলা রানি বলেন, ‘মশা অতিরিক্ত, দিন কি রাত মশার জ্বালায় থাকাই যায় না। মশার কামড়ে সমস্ত শরীর ফুলে যায়।’
আরও পড়ুন: এখনই মশার কামড়ে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী, বর্ষায় কী হবে?
একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল দাস বলেন, ‘দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে শুতে হয়। মশার উপদ্রবে আমাদের জীবনযাত্রা এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রব বাড়লেও পৌর কর্তৃপক্ষ যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এই বিষয়ে এখনও নিচ্ছেন না কোনো ব্যবস্থা। অথচ আমরা নিয়মিত পৌর কর দিচ্ছি।’
এ দিকে মশার উপদ্রবের কথা স্বীকার করে পৌর প্রশাসক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ফগার মেশিনগুলো পুরাতন হওয়ায় মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। তবে ইতোমধ্যে নতুন ফগার মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর উপদ্রব থেকে পৌরবাসীকে রক্ষায় মাসব্যাপী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। নতুন ফগার মেশিন হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এখন মশার উপদ্রবে নাকাল লক্ষ্মীপুর পৌরবাসী। আর এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দুষলেন বাসিন্দারা। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে রোগ-বালাই বাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন পৌরবাসী এমনটাই জানান চিকিৎসকরা।