শহরের অলিগলির দোকানগুলোতে চাইলেই মেলে নানা ব্র্যান্ডের মশার কয়েল। দামও সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকায় এগুলো হরহামেশাই কেনা হচ্ছে। কোনো কয়েল ২৪ ঘণ্টা, আবার কোনোটা ৭২ ঘণ্টার নিরাপত্তা দেয় বলে দাবি করছে। মশা তাড়াতে তাই ঘরে ঘরেই জ্বলছে কয়েল। বন্ধ ঘরে ধোঁয়ায় ভরে উঠছে চারপাশ।
তবে রাতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমানো মানেই ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা থেকে পুরোপুরি নিরাপদ হওয়া নয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, কয়েলের ব্যবহার মশা থেকে শতভাগ মুক্তি দেয় না, বরং এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও থাকে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল মা-মেয়ের
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে গিয়ে ফুসফুসের ক্ষতি হচ্ছে। কয়েলের ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নেয়ার জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কয়েলে নানা ধরনের গ্যাস থাকে, যা শরীরে গেলে ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।’
সরজমিনে রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগই বাসায় কয়েল ব্যবহার করেন। কিন্তু কয়েল ব্যবহারের পরও তারা ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকতে পারেননি। বরং ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা ও অন্যান্য অস্বস্তি অনুভব করছেন। রোগীরা জানান, কয়েল ব্যবহার করলেও মশার প্রকোপ কমছে না এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, মশার কয়েল ব্যবহারে মানবস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই ধোঁয়া মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘মশা থেকে বাঁচতে যে কয়েল বা অ্যারোশল ব্যবহার করা হচ্ছে, তা কখনও কখনও মানুষের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। কারণ মশার কয়েলের ধোঁয়া শরীরে ঢোকার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়া অ্যাজমা, হাঁপানি বা অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রীয় সমস্যা, অনেকের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি ও ফুসকুরিও দেখা দিতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা মশার কয়েল ব্যবহারে মানুষকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি এর উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে কড়াকড়ি ও নজরদারি চালানোর তাগিদও দিচ্ছেন।
]]>