মরুভূমির সাম্মাম চাষে বাজিমাত বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের

৩ সপ্তাহ আগে
মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা জমিতে মাচার নিচে ঝুলছে গোলাকার, সুস্বাদু ফল সাম্মাম। দেখতে অনেকটা বেল বা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতরে রসালো, তরমুজের মতো। উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিকর এই মরুভূমির ফল সাম্মামের চাষাবাদ করা হয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে। প্রথমবারের মতো নতুন জাতের এই ফল চাষে সাড়া ফেলেছেন পাঁচজন কৃষি উদ্যোক্তা।

ভোলাহাট উপজেলার দক্ষিণ নামোটোলা পোলাডাঙ্গা গ্রামের আমিরুল ইসলাম, ময়ামারি গ্রামের মনিরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, শামীম জাহাঙ্গীর এবং লম্বাটোলা পোলাডাঙ্গার আব্দুল হামিদ। ভারতীয় সীমান্তবর্তী বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ মাটিতে মরুভূমির উচ্চমূল্যের ফল সাম্মাম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তারা।

 

সাম্মাম চাষীরা জানান, এক বিঘা জমিতে এই ফল চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। প্রথম বছরে বিঘাপ্রতি লাভ হয়েছে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। সাম্মাম চাষাবাদে সেচের পরিমাণ কম লাগায় কৃষকরা ভবিষ্যতে আরও চাষাবাদ বাড়ানোর আশা করছেন।

 

আরও পড়ুন: যশোরে খেজুরের রস আহরণে জোর প্রস্তুতি, ১৫০ কোটি টাকার গুড় উৎপাদনের টার্গেট

 

তাদের দাবি, বরেন্দ্র অঞ্চলের জমি ও আবহাওয়া মরুর ফল সাম্মাম চাষের জন্য উপযোগী। কৃষক আব্দুর রহমান জানান, ‘মূলত ইউটিউব দেখে চাষের আগ্রহ জাগে। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও উৎসাহে গত বছর ভালো ফলন পেয়েছিলাম। এজন্য চলতি বছর পুরোপুরি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু করেছি। প্রতি বিঘায় ৪৫-৫০ হাজার টাকা খরচ করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় হচ্ছে। বাজারে চাহিদা থাকায় প্রতিদিন এসব ফল ঢাকা ও চট্টগ্রামে পাঠানো হচ্ছে।

 

আরেক কৃষক আব্দুল হামিদ জানান, ‘আমরা ধান, গম, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করি। তবে এই ফল আগে কখনো চাষ করিনি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছি। আগামীতে চাষের পরিমাণ বাড়াবো। কারণ অন্যান্য ফসল চাষে যেখানে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়, সেখানে সাম্মাম চাষে ঝুঁকি কম। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় লাভ নিশ্চিত।’

 

তাদের সফল সাম্মাম চাষ এলাকার কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কৃষক কাসেম আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকায় গত বছর থেকেই কয়েকজন কৃষক এই ফল চাষ শুরু করেছেন। প্রথমে আমরা চাষ নিয়ে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু ফলন ও বাজার দেখে আশা জন্মেছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটিতেও মরুর এই ফল চাষে ভালো ফলন সম্ভব, এই বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আগামী বছর এর ব্যাপক চাষাবাদ হবে। তবে বীজ খুবই দুষ্প্রাপ্য ও দামি হওয়ায় কৃষকদের কাছে সহজে বিতরণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।’

 

আরও পড়ুন: নদীর বুকে শত বছরের ঐতিহ্য, বৈঠাকাটা বাজারে নৌকাতেই চলে বেচাকেনা

 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল ওদুদ বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে এই চাষে প্রাথমিক সাফল্য অন্যান্য কৃষকদের অনুপ্রাণিত করছে। পাঁচজন কৃষকের সাম্মাম চাষ দেখে এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। অনেকেই নতুন এই ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্বল্পতা থাকায় সাম্মাম চাষের পরিধি বৃদ্ধির দাবি করা হচ্ছে, কারণ এতে পানির ব্যবহার খুব কম লাগে।’

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী জানান, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে চলমান পানি সংকটের সমাধান হিসেবে অন্যান্য ফসলের বিকল্প হিসাবে অধিক পুষ্টিকর সাম্মাম চাষে কৃষকদের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নতুন জাতের এই ফল চাষাবাদের জন্য মাঠ দিবসের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

 

সাম্মাম বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য সম্ভাবনাময় একটি ফল চাষ হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাজারে চাহিদা ও দাম থাকায় কৃষকরাও সাম্মাম চাষে আগ্রহী। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রথমবারের মতো ১৫ বিঘা জমিতে সাম্মাম চাষাবাদ হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন