অষ্টম হিজরির রমজান মাসের দশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর নবীজি দশ হাজার মুজাহিদের একটি বাহিনী নিয়ে মক্কার উদ্দেশে বের হলেন। বের হওয়ার সময় আবু রুহম কুলছুম বিন হুসাইনকে মদিনার খলীফা নির্বাচন করলেন।
মক্কা আক্রমণ ও জয় করার কারণ হচ্ছে, কুরাইশরা হুদায়বিয়ার সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ করেছিল এবং খোযায়া গোত্রের উপর রাতের অন্ধকারে আক্রমণ করে তাদেরকে অকাতরে হত্যা করেছিল। হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্ত মোতাবেক খোযায়া গোত্র নবীজির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিল হুদায়বিয়ার সন্ধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
নবীজি মুজাহিদ বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিনা বাধায় মক্কায় প্রবেশ করলেন। প্রথমে তিনি কাবা ঘরের দিকে গেলেন। তার চার পাশে আনসার ও মুহাজিরগণ ঘিরে ছিল।
আরও পড়ুন: বিড়ি-সিগারেট খেলে কি ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না?
কাবায় গিয়ে তিনি আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করলেন। নবীজির হাতে একটি ধনুক ছিল। সে সময় কাবার অভ্যন্তরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। ধনুকের মাধ্যমে এক এক করে তিনি মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে ফেললেন। এ সময় তিনি কোরআনের এই আয়াতটি পাঠ করছিলেন,
وَقُلْ جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا অর্থ: বলুন! সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। (সুরা বনি ইসরাইল: ৮)
নবীজি কাবার ভেতরে প্রবেশ করলেন এবং নামাজ পড়লেন। নামাজ শেষে বাইরে আসলেন। কুরাইশরা তখন সারিবদ্ধভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে অবস্থান করছিল।
তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন- হে কুরাইশ সম্প্রদায়? তোমাদের সঙ্গে আজ আমি কেমন আচরণ করবো বলে মনে করো? সকলেই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করতে লাগল- আমরা আপনার কাছ থেকে খুব ভাল আচরণ কামনা করছি। ইউসুফ (আ.) তার ভাইদেরকে যা বলেছিলেন আজ আমিও তোমাদের সঙ্গে তাই বলছি। আজ তোমাদের উপর কোনো অভিযোগ নেই। তোমরা মুক্ত-স্বাধীন।
কিন্তু জঘন্য অপরাধ এবং অমানবিক কাজের কারণে ১৫ জন কাফের সেই সাধারণ ক্ষমার আওতাভুক্ত ছিল না। ১৫ জনের মধ্য থেকে ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। হজরত সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, বিজয়ের দিন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে চার পুরুষ ও দুই নারী ছাড়া। তিনি বলেন, তাদের যদি কাবার গিলাফ আঁকড়ে ধরা অবস্থাতেও পাও, তবুও তাদের হত্যা করো।’ (আবু দাউদ)
১৫ অপরাধীর তালিকা হলো আবদুল্লাহ ইবনে খাতাল, ফারতানা ও কারিনা (এরা দুজন ছিল আবদুল্লাহ ইবনে খাতালের দাসি), সারাহ, হুয়াইরিস ইবনে নুকাইদ, মিকয়াস ইবনে সুবাবা, আবদুল্লাহ ইবনে সাদ ইবনে আবি সারাহ, ইকরামা ইবনে আবি জাহেল, হাব্বার ইবনে আসওয়াদ, কাব ইবনে জুহাইর, ওয়াহশি ইবনে হারব, হারিস ইবনে তুলাতিল, আবদুল্লাহ ইবনে জিবারা, হুবাইরা ইবনে আবি ওয়াহাব এবং হিন্দ বিনতে উতবা।
আরও পড়ুন: জুলুমের শেষ পরিণতি আর জালিমের শাস্তি কী?
এদের মধ্য থেকে যাদের হত্যা করা হয় তারা হলো, আবদুল্লাহ ইবনে খাতাল, আবদুল্লাহর দুই বাঁদি থেকে একজন, সারাহ, হুয়াইরিস ইবনে নুকাইদ, মিকয়াস ইবনে সুবাবা এবং হারিস ইবনে তুলাতিল।
]]>