ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য মিলেছে প্রতিবেদনে, হিসাবের বাইরে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা

৩ সপ্তাহ আগে
জীবন্ত মানুষের ঠোঁটে সেলাই। সরাসরি মাথায় গুলি করে হত্যা। গুম ও হত্যায় ছিল ভারতের সংশ্লিষ্টতাও। এমনই তথ্য উঠে এসেছে গুম সংক্রান্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে। গুম হওয়া স্বজনদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ বলছে, কমিশনের হিসাবের বাইরে গুম হওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। গুমের শিকার ব্যক্তি কিংবা স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে এরইমধ্যে ভুক্তভোগীদের তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সময়।

২০১০ সালে ঢাকার ধানমন্ডি থেকে র‍্যাব এক যুবককে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এরপর কোনো অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা ছাড়াই তার ঠোঁট সেলাই করে দেয়া হয়। আরেক ভুক্তভোগীকে আটক করে যৌনাঙ্গ এবং কানে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। এক ভুক্তভোগী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে উদ্ধার করে সেখানেই গুলি করা হয়। আবার কখনও রেললাইনে ফেলে রেখে মরদেহ বিচ্ছিন্ন করতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুমের পর এমন সব ভয়াবহ নির্যাতনের তথ্য উঠে এসেছে তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে।

 

গুমের শিকার অনেককেই হত্যার প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের মাথায় গুলি করে মেরে ফেলা হতো, এরপর মৃতদেহ সিমেন্টের ব্যাগের সাথে বেঁধে নদীতে ফেলে দেয়া হতো যেন তা ডুবে যায়।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সময় সংবাদকে বলেন, 

এই যে তারা (বিগত সরকার) হাজার হাজার মানুষকে মেরে গুম করেছে। আমার বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটেছে, এই রকম খবর পড়তে গা শিউরে উঠছে। যারা জড়িত তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদেরকে বিচারের আওতায় আমরা আনব।

 

গুমের নির্দেশ আসত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। এসব গুমের জন্য ভারতের সহায়তা নিয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশাসন। সুখরঞ্জন বালী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে গুমের পর ভারতে স্থানান্তরের ঘটনা এখানে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একজন সৈনিক তদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, ২০১১ সালে দুই দফায় তামাবিল সীমান্ত দিয়ে তিনজন 'বন্দিকে' আনা হয়। এসময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সাদা পোশাকধারী সদস্যরা ছিলেন। দু'জন 'বন্দিকে' রাস্তার পাশে হত্যা করা হয়। জীবিত আরেক বন্দিকে র‌্যাবের আরেকটি দলের কাছে তুলে দেয়া হয়। র‌্যাবও দু'জন 'বন্দিকে' একই প্রক্রিয়ায় ভারতীয়দের কাছে তুলে দিয়েছিল।

 

গুমের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে র‍্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং এনএসআই প্রধান ভূমিকা পালন করেছে বলে প্রতিবেদনে তুলে ধরে কমিশন। র‌্যাব এবং ডিজিএফআই-এ কর্মরত সামরিক কর্মকর্তারা বিশেষ উপায়ে নির্যাতন চালাত গুম করা ব্যক্তিদের ওপর।

 

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন জমা /গুমকাণ্ডে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন, র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ

 

২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৬৭৬টি গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে কমিশনে। যার মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ পর্যালোচনা করে প্রাথমিক এ প্রতিবেদন দিয়েছে গুম সংক্রান্ত কমিশন। তবে গুম হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘মায়ের ডাক’ বলছে, গুম হওয়া ব্যক্তির প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি।

 

‘মায়ের ডাক’  এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, যে সংখ্যাটা বললাম, কয়েক মাসেরটা দেখলে বলা যাবে আরও বেশি। ভুক্তভোগী প্রতিটি পরিবারকে জানানো যে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কি করা হয়েছিল। যদি তথ্য তাদের কাছে থেকে থাকে। যতক্ষণ না জানা যাচ্ছে, ততক্ষণ কমিশনের প্রক্রিয়াটা আমাদের কাছে স্বচ্ছ মনে হচ্ছে না। সেনাবাহিনী বা ডিজিএফআই তাদের নিয়ে কেন আমরা কথা বলছি না। ক্যান্টনমেন্টের যে সেলগুলো ছিল সেখানে যারা ছিলেন, কারা ছিলেন, তাদের কি করা হয়েছে। এই মানুষগুলো কোথায়।    

 

গুমের শিকার ব্যক্তি কিংবা স্বজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে উল্লেখ করে ভুক্তভোগীদের তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, 

যারা অভিযোগ দিবেন তাদের নিরাপত্তা দেয়া হবে। আপনারা আসুন, আপনাদের কথাগুলো বলুন। আপনার নিরাপত্তা দেয়া হবে। আমরা চাই আপনারা আসুন।  

 

পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে আরও ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে ধারনা করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, র‌্যাবকে বিলুপ্ত করা হবে কিনা তা উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা হবে।

 

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন