ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক, কী বলছেন বিশ্লেষকরা?

১ দিন আগে
এক হাজার ২০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ উদ্যোগে বিনিয়োগের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৭০০ কোটি টাকা এসেছে ব্যাংকগুলো থেকে। অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সফল হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে, একইসঙ্গে তৃণমূল থেকে বৃহৎ অর্থনীতিতেও প্রভাব রাখবে তরুণরা। এজন্য ব্যাংকগুলোর পরিবেশ উদ্যোক্তাবান্ধব হওয়ার পরামর্শ আর্থিক খাত বিশ্লেষকদের।

মধুর চর থেকে আব্দুল বাসের কাঁচা পেঁপে নিয়ে এসেছেন নয়াডীঙ্গী বাজারে। তবে ৬০ মণ পেঁপের চার মণের দামই গেল লরি খরচা আর শ্রমিকের মজুরিতে। যদি জানতেন কোন বাজারে দাম বেশি, তাহলে হয়তো সেখানেই তিনি যেতেন।

 

আব্দুল বাসেরের মতো কৃষকদের জন্য দুই যুবক গড়ে তুলেছেন কৃষি সহায়তা সেবা উদ্যোগ ‘ফসল’। কৃষকরা কিভাবে ভালো দাম পাবেন, কোন বাজারে আজকের দর কেমন, ফসল বিক্রির ভালো দামের সময় কখন হতে পারে-- এর পূর্বাভাস দিতে নিজেরা তৈরি করেছেন প্রযুক্তি নির্ভর ডাটাবেজ। কিন্তু নিজেদের কার্যক্রম বাড়াতে ব্যাংকে গেলেও সেই অভিজ্ঞতা তিক্ত। ব্যাংক গবেষণা আর তথ্যের ওপর নির্ভর করে কখনো কখনো বাজারের অদৃশ্য সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার শক্তি রাখলেও ব্যাংকের অ্যালগরিদম টেবিল পেরিয়ে প্রান্তিকে পৌঁছাতে পারছে না দুই তরুণের এই উদ্যোগ।

 

ফসল ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা সাকিব হোসাইনের মতে, দেশীয় ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বিনিয়োগ পেলে প্রান্তিকের কৃষকের মাঠ থেকে মূল্যস্ফিতির চাপে থাকা খাবারের মূল্যে প্রভাব রাখতে পারে শত শত তরুণের ক্ষুদ্র লাভের এসব উদ্যোগ।

 

আরও পড়ুন: বিনিয়োগ সংকট ও বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহারের অভাবে ধুঁকছে স্টার্টআপ

 

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সম্ভাবনাময় ছোটছোট উদ্যোগ বা স্টার্টাপে বিনিয়োগ করে। বিশ্বের অর্থনীতি শাসন করা ইনটেল, ফেইসবুক, মাইক্রোসফট, ই-বে, অ্যামাজন, অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠান আজ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ওপর দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশেও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল জনপ্রিয় করতে আর্থিক বিনিয়োগ ছাড়াও নীতি সহায়তা ও পুঁজিবাজারে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।

 

সম্প্রতি স্টার্টআপ খাতে অর্থায়নের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্টার্ট আপের সংজ্ঞায় প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বা শিল্প উদ্যোগ অথবা দেশি-বিদেশি যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত সম্ভাবনাময় বিস্তৃতিযোগ্য নতুন উদ্ভাবনী পণ্য বা সেবা অথবা দারকারী প্রতিষ্ঠান এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সহায়তা পাবেন। এরই অংশ হিসেবে জয়েন্ট ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে এখন পর্যন্ত ৪২টি ব্যাংকের নিট মুনাফা থেকে এক শতাংশ হারে ৭০০ কোটি টাকা সংগ্রহ হয়েছে। আরও ৫০০ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব প্রতিষ্ঠানের বয়স ১২ বছরের মধ্যে হবে, তারা এই বিনিয়োগে আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া যেসব উদ্যোক্তাদের বয়স ২১ বছরের বেশি হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের বয়স বিবেচনায় বিভিন্ন স্তরে ২ কোটি টাকা থেকে ৮ কোটি পর্যন্ত এই বিনিয়োগ পাওয়া যাবে। তবে এই বরাদ্দকৃত অর্থ যথেষ্ট হবে না বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

 

আরও পড়ুন: স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান সময় সংবাদকে বলেন, 

অনেকেই প্রাথমিকভাবে বলবে যে এক হাজার ২০০ কোটি টাকায় কী হবে? কিন্তু আমার কথা হলো যে শূন্যের চেয়ে তো এক হাজার ২০০ কোটি টাকা অনেক বেশি।

 

আর্থিক খাত বিশ্লেষকদের মতে, স্টার্টআপ বিনিয়োগে ঝুঁকি বেশি, আবার সফল হলে লাভও বেশি। ফলে অর্থনীতির নির্ভরশীলতার ফ্ল্যাডলাইট পাল্টে দিতে পারে এই খাত।

 

বিআইবিএমের অধ্যাপক ড. শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, ‘৫টি প্রতিষ্ঠানতে একসঙ্গে টাকা দেবো। ২টি টিকবে, আর ২টির মধ্যে কোনোটাতে রিটার্ন আসবে ৫০ শতাংশ, কোনোটাতে ৬০ শতাংশ। এরপর ৫টার গড় কিন্তু ১০ শতাংশের বেশি হচ্ছে।’

 

এদিকে একইসঙ্গে স্টার্টআপে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল দেশের বাজারে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে মেধা পাচারও কমাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

 

আরও পড়ুন: স্টার্টআপে বিনিয়োগে ভাটা, এআই সম্পর্কিত দক্ষতা বাড়ানোর তাগিদ

 

সাবেক ব্যাংকার মামুন রশীদ বলেন, 

ভালো ভালো তরুণ-তরুণীরা এখন চলে যাচ্ছে স্টার্টআপে। আর স্টার্টআপে সফল না হলে তারা চলে যাচ্ছেন বিদেশে। তাই আমাদের ইকোসিস্টেমের মধ্যে মেধা লালনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে, যেটা ভবিষ্যতে আমাদের নীতি প্রণয়নেও কাজে লাগবে।  

 

গবেষণা প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসেলের তথ্যমতে, গত এক দশকে স্টার্টআপ খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের মাধ্যমে। সব মিলে এই খাতে ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যেখানে বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অংশিদারিত্ব ১০ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। মাত্র ২০৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ তহবিল দেশীয়। স্টার্টআপ খাতে বিনিয়োগ সহযোগী দেশীয় পরিবেশ তৈরি করা গেলে দেশের অন্যতম সফল ও টেকসই খাত হতে পারে এই খাত।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন