ভূমিকম্পের মধ্যেই আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে পাকিস্তান

১ সপ্তাহে আগে
আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যেই আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। ভূমিকম্পের কারণে জাতিসংঘ গণহারে বিতাড়ন স্থগিত করার আহ্বান জানালেও তা শুনছে না। সময়সীমা শেষ হওয়ার অজুহাতে বিতাড়ন জোরদার করেছে দেশটি।

গত রোববার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পাহাড়ি প্রদেশ কুনারে ৬ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর আরও অন্তত তিনটি আফটারশক হয়। সেগুলোর মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২-এর মধ্যে।

 

মাঝারি মাত্রার হলেও অগভীর এ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এপির প্রতিবেদন মতে, ভূমিকম্পে কুনার প্রদেশের বেশ কয়েকটি কার্যত গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। তালেবান সরকারের তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ২০০ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৬৪৯ জন। হাজার হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ লাখ মানুষ।

 

এদিকে এখনও মাঝে মাঝেই আফটারশক আঘাত হানছে। অন্যদিকে প্রথম ভূমিকম্পের ছয়দিন পরও এখনও উদ্ধার তৎপরতা চলছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিতদের উদ্ধারের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। ফলে প্রতি মুহূর্তেই নতুন করে লাশ এবং আহত ব্যক্তি উদ্ধারের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে আফগান শরণার্থীদের গণনির্বাসন স্থগিত করার আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। সংস্থাটির শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এক বার্তায় বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে অবৈধ বিদেশি প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন স্থগিত করুন।’

 

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে এবার মানবিক সহায়তা পাঠালো রাশিয়া

 

তিনি সতর্ক করে বলেন, যাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে তারা আসলে ‘একটি বিপর্যস্ত অঞ্চলে ফিরে যাচ্ছে’। তবে জাতিসংঘের এই আহ্বান মানছে না পাকিস্তান। 

 

টোলো নিউজ জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে পাকিস্তান থেকে আফগান অভিবাসীদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনা বেড়েছে। শরণার্থীদের আফগানিস্তানে ফেরত যাওয়ার জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল পাকিস্তান। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর থেকেই বিতাড়ানের হার তীব্র হয়েছে।

 

এএফপির প্রতিবেদন মতে, ১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশ ছাড়ার সময়সীমা শেষ হওয়ায় সীমান্তে ফেরত যাত্রীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। চমন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আফগানিস্তানে প্রবেশ করছেন। একইভাবে তোরখাম সীমান্ত দিয়েও ফেরত যাত্রীদের ঢল নেমেছে।

 

খাইবার পাখতুনখোয়ায় আফগান অভিবাসীদের প্রতিনিধি মীর মিয়াখিল বলেন, ‘সবাই খুবই উদ্বিগ্ন। কারণ আমরা প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এতো অল্প সময়ের মধ্যে সবকিছু ফেলে চলে যাওয়া অসম্ভব।’

 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানে ১১ টন ত্রাণ পাঠাল বাংলাদেশ

 

পাকিস্তানে বসবাসকারী আরেক আফগান অভিবাসী আতিকুল্লাহ মনসুর বলেন, ‘ফেরত পাঠানো বন্ধ হয়নি বরং প্রক্রিয়াটি আরো বেড়েছে। আমরা আফগান অভিবাসী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার পাকিস্তান সরকারের কাছে আবেদন করেছি, যাতে ধীরে ধীরে এবং নিরাপদে ফেরত পাঠানো হয়।’

 

আফগান অভিবাসীরা বলছেন, ভিসার মেয়াদ বাড়াচ্ছে না পাকিস্তান, এরফলে তারা সমস্যায় পড়েছে। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জোরপূর্বক বহিষ্কার করা বন্ধ করতে পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

 

পাকিস্তানে বসবাসকারী একজন আফগান অভিবাসী মোহাম্মদ রেজা সাজেশ বলেন, ‘আফগান শরণার্থীরা অসংখ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। ভিসা নবায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এবং ভিসা মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।’

 

অভিবাসী অধিকার কর্মী জামাল মুসলিম বলেন, ‘পাকিস্তানকে তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। বৈধ কাগজপত্রধারী হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকেও ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।’

 

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে আবারও ৬ মাত্রার ভূমিকম্প

 

পাকিস্তান গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সোভিয়েত আক্রমণ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের তালেবান ক্ষমতা দখল পর্যন্ত আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি হামলা ও সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদ ২০২৩ সালে শরণার্থীদের বহিষ্কারে অভিযান শুরু করে।

 

জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ইতিমধ্যে ১২ লাখেরও বেশি আফগানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, এর মধ্যে চলতি বছরেই চার লাখ ৪৩ হাজারের বেশি। সর্বশেষ অভিযানে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ডধারী প্রায় ১৩ লাখ আফগানকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন