ভূমিকম্পে ঢাকার বড় বিপদ স্পষ্ট হচ্ছে-দৈনিক প্রথম আলোর প্রধান সংবাদ এটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার কাছে পরপর চারটি ভূমিকম্প রাজধানীর বড় বিপদের ঝুঁকি আরও স্পষ্ট করেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। নরসিংদীর মাধবদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরে আরও তিনটি ছোট ভূমিকম্প প্রমাণ করেছে যে ঢাকার আশপাশের সাব-ফল্টটি বড় ও সক্রিয়। গত পাঁচ বছরে দেশের ভেতরে ৩৯টি ভূমিকম্পের মধ্যে ১১টির উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকার ৮৬ কিলোমিটারের মধ্যে, যা ধারণা দেয় রাজধানী এলাকার ভূকম্পন ঝুঁকি বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাবডাকশন জোনে জমে থাকা শক্তির খুব সামান্য নির্গত হয়েছে; ধারাবাহিক আফটারশক ইঙ্গিত দিচ্ছে বড় ভূমিকম্প নিকটে হতে পারে।
ঢাকার ঝুঁকির চার মূল কারণ—উৎপত্তিস্থলের নৈকট্য, নিচু জমি ভরাট করে গড়ে ওঠা নতুন এলাকা, ভবন নির্মাণে মান না মানা, এবং অধিক জনঘনত্ব। এসব দিক ঢাকাকে আরও বিপজ্জনক করে তুলছে। দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনো অপ্রতুল।
২০১৬ সালে ন্যাশনাল অপারেশন সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও জায়গাসংকটে তা এগোয়নি। সরঞ্জাম সংগ্রহ চলছে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলকে সচেতনতা কার্যক্রমে যুক্ত করার উদ্যোগ আছে, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, তথ্য ব্যবস্থাপনা, দ্রুত সমন্বয়, এবং স্থানীয় সরকারকে যুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখনো দুর্বল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও ভূমিকম্প প্রস্তুতির চর্চা নেই, যার ফলে আতঙ্কে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার ঝুঁকি থাকে।
সামগ্রিকভাবে, ঢাকা বড় ভূমিকম্পের সরাসরি ঝুঁকিতে আছে এবং প্রস্তুতির ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করছে।
ঢাকায় দুর্বল ভিত্তির ওপরে ২১ লাখ ভবন-দৈনিক ইত্তেফাকের প্রথম পাতার সংবাদ এটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজউকের আওতাধীন ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ২২ লাখ ভবনের মধ্যে ২১ লাখই দুর্বল ভিত্তির ওপর নির্মিত এবং অধিকাংশই বিল্ডিং কোড না মেনে তৈরি। রাজউকের তথ্য অনুযায়ী, এসব ভবনের মধ্যে ৬ লাখ চার থেকে ৩০ তলা পর্যন্ত বহুতল ভবন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় অতি সংকীর্ণ জমিতে পরিকল্পনা ছাড়া বহুতল ভবন নির্মাণ ঝুঁকি বাড়িয়েছে। সরকারিভাবে নির্মিত নতুন ভবনেরও ৩৭ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে—এর মধ্যে পিজি হাসপাতালের ১৭ তলা ভবনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোর পর রাজউক চেয়ারম্যান জানান, দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তে উদ্যোগ নেওয়া হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পুরান ঢাকার প্রায় ৯০ শতাংশ ভবন কোড মানেনি এবং এসব ভবনে প্রকৌশলগত সমাধান জরুরি। নগরবিদদের মতে, ঢাকার অনেক ভবন ২০–৩০ বছর আগে নির্মিত; অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহৃত হয়েছে এবং অনুমোদিত নকশার বাইরে অতিরিক্ত তলা তোলা হয়েছে। ফলে সামান্য কম্পনেও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
এছাড়া, ভূমিকম্প-সহনশীল নকশা, সেফটি জোন, খোলা জায়গা, প্রশস্ত রাস্তা, নিরাপদ গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইনের অভাব ঢাকাকে আরও বিপজ্জনক করেছে।
রাজউকের তথ্য বলছে, শহরের ৭৪ শতাংশ ভবনই নকশাবহির্ভূত, অথচ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি। সেফটি অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণে ২১ লাখের বেশি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার ১৩ শতাংশ এলাকায় ভবন নির্মাণই উচিত নয়; তবু সেখানে নির্মাণ চলায় রাজধানী ক্রমেই অরক্ষিত হয়ে উঠছে।
ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকি, আতঙ্ক-দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রধান সংবাদ এটি।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় শক্তিশালী ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সাড়ে ৩১ ঘণ্টায় আরও তিনবার ভূকম্পন হওয়ায় জনমনে আতঙ্ক বেড়েছে। শুক্রবার নরসিংদীর মাধবদীতে হওয়া প্রধান ভূমিকম্পের পর শনিবার সকাল ও সন্ধ্যায় তিনটি ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হয়—এর মধ্যে তিনটির উৎপত্তিস্থল নরসিংদী, আর একটি ঢাকার বাড্ডায়। এগুলোর মাত্রা ছিল ৩.৩, ৩.৭ ও ৪.৩।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শনিবারের বেশিরভাগ ভূমিকম্প প্রধান ভূমিকম্পের আফটারশক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বড় ভূমিকম্পের পর এমন কম শক্তির বহু আফটারশক হতে পারে—এমনকি ৫০টিও হতে পারে। তবে ঢাকার বাড্ডায় হওয়া ভূমিকম্পটি আফটারশক নয়, কারণ এর উৎপত্তিস্থল ভিন্ন এবং তা স্থানীয় ফল্ট লাইনের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
গবেষকদের মতে, শুক্রবারের ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাব্য পূর্বলক্ষণও হতে পারে, কারণ ওই অঞ্চলের ফল্ট লাইনে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা শক্তি ছোট ছোট ভূমিকম্প আকারে বের হতে শুরু করেছে। ছোট ভূমিকম্পগুলো ফোরশকও হতে পারে, যদিও তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, এ ধরনের ধারাবাহিক ভূমিকম্প বড় বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ায়। এখনই জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত, উদ্ধার সক্ষমতা বাড়ানো ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির কাজ জরুরি। সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত, কারণ খুব অল্প ব্যবধানে একাধিক ভূমিকম্প হওয়ায় অনেকেই নতুন কম্পন আবার আসছে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সামগ্রিকভাবে, ধারাবাহিক ভূকম্পন রাজধানীর নিকটবর্তী ফল্ট লাইনের সক্রিয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে এবং বড় ঝুঁকির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিচ্ছেন।
৩২ ঘণ্টায় চার দফা ভূমিকম্প, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সর্বত্র-দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সংবাদ এটি।
এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দিনে চার দফা ভূমিকম্পে রাজধানী ও আশপাশের জেলায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে নরসিংদীর মাধবদীতে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে সারা দেশে দুই শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু ও বহু মানুষ আহত হন। মাত্র ২৪ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে আবার ৩.৩ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়।
সন্ধ্যায় আরও দুটি ভূমিকম্প হয়—একটির কেন্দ্র ঢাকার বাড্ডা, অপরটির নরসিংদীর পলাশ; মাত্রা ছিল যথাক্রমে ৩.৭ ও ৪.৩।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব কম্পন মূলত শুক্রবারের ভূমিকম্পের আফটারশক। দীর্ঘদিন ধরে ফল্ট লাইনে জমে থাকা শক্তি নির্গত হওয়ায় কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত ছোট ভূমিকম্প হতে পারে।
তারা মনে করেন, তাৎক্ষণিকভাবে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি কম হলেও সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা শক্তি সঞ্চিত থাকার কারণে ভবিষ্যতে আরও বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়েছেন।
তাদের মতে, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানো, পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সরিয়ে ফেলা, বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে মানা এবং ঢাকার জনঘনত্ব কমাতে বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। পাশাপাশি ভূমিকম্পের সময় লোকজনের আতঙ্কে দৌড়ে নামা—এতে নতুন দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে—তাই সঠিক নিরাপত্তা আচরণ শেখানো জরুরি।
একাধিক ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ বিবেচনায় রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
]]>
১৮ ঘন্টা আগে
২






Bengali (BD) ·
English (US) ·