ইমাম ইবনে আবি শাইবা তার ‘মুসান্নাফ’-এ এই ঘটনার বর্ণনা আনেন। সেখানে হজরত সাফওয়ান ইবনে উমর (রা.)-এর সূত্রে শুরাহবিল বিন সিমত বলেন, ভূমিকম্প হলে হজরত ওমর (রা.) মিম্বারে উঠে খুতবা দেন এবং বলেন, হে মদিনার লোক! তোমরা এত দ্রুত কী পরিবর্তন করে ফেললে! আল্লাহর কসম! যদি ভূমিকম্প আবার ফিরে আসে, আমি তোমাদের মধ্য থেকে সরে যাব। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, ৩১২১৯)
অন্য এক রেওয়ায়েতে ইমাম বায়হাকি উল্লেখ করেন যে, হজরত ওমর (রা.) মানুষকে বলেছিলেন, মানুষ যে গুনাহ সৃষ্টি করে, তার কারণেই ভূমিকম্প আসে। (শু‘আবুল ইমান, ৮/৩৬৪) তার বক্তব্যে স্পষ্ট দেখা যায়, ভূমিকম্প তার কাছে কেবল প্রাকৃতিক ঘটনা ছিল না; বরং এটি ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কসংকেত।
হজরত ওমর বলেন, তোমরা কত দ্রুত বদলে গেছো, এ কথাটি নির্দেশ করে যে, সমাজে কিছু গুনাহ, শৈথিল্য ও গাফিলতি দেখা দিয়েছিল, যা তার দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি জানতেন, আল্লাহর রহমত যখন সরে যায়, তখন বিপর্যয় ও সতর্কবার্তা নেমে আসে।
আরও পড়ুন: গভীর রাতে যে নামাজে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি খুশি হোন
তার ঘোষণা, যদি আবার আসে, আমি চলে যাব, দুইটি বিষয় প্রমাণ করে। প্রথমত, আল্লাহর শাস্তির প্রতি তার ভয়। দ্বিতীয়ত, একজন শাসকের দায়িত্ব, সমাজকে পাপ থেকে ফিরিয়ে আনা। কারণ নেতার দায়িত্ব শুধু প্রশাসনিক নয়; বরং নৈতিক শুদ্ধতাও প্রতিষ্ঠা করা।
হজরত ওমরের কথার পেছনে কুরআন ও হাদিসে সুস্পষ্ট ভিত্তি রয়েছে। কুরআন বলে, তোমাদের বিপদের কারণ তোমাদের নিজেদের কর্ম। (শুরা, ৩০) এবং আমি নিদর্শন পাঠাই ভীতি প্রদর্শনের জন্য। (ইসরা, ৫৯)। তাই প্রাকৃতিক বিপর্যয় শুধু বিজ্ঞান নয়; বরং আধ্যাত্মিক বার্তাও।
রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বহু হাদিসে উল্লেখ আছে, যখন সমাজে পাপাচার বৃদ্ধি পায়, তখন বিপর্যয় নেমে আসে; অশ্লীলতা, প্রতারণা, অবিচার ও যাকাত অবহেলার কারণে দুর্ভিক্ষ, রোগ, শাস্তি ও সমাজিক অস্থিরতা দেখা দেয়। একইসঙ্গে কেয়ামতের আগে ভূমিকম্প বাড়বে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। (বুখারি ১০৩৬)
হাদিস বিশারদদের মতে, হজরত ওমরের যুগে ব্যবসায় প্রতারণা, বিলাসিতা, গাফিলতি ও কিছু সামাজিক গুনাহ বাড়তে শুরু করেছিল। তাই তিনি ভূমিকম্পকে কেবল কাঁপুনি হিসেবে নয়, বরং আত্মসমালোচনার আহ্বান হিসেবে গ্রহণ করেন। তার ইমানি সংবেদনশীলতা এত গভীর ছিল যে, সামান্য পরিবর্তনও তিনি আল্লাহর অসন্তুষ্টির সম্ভাবনা হিসেবে দেখতেন।
এই ঘটনার মাধ্যমে চারটি শিক্ষা স্পষ্ট হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে, সমাজের গুনাহ আল্লাহর রহমত হটিয়ে দেয়, নেতারও গুনাহের পরিবেশে থাকা উচিত নয়, এবং বিপদ দেখা দিলে আল্লাহর দিকে ফিরে আসাই নিরাপত্তার পথ।
আজ যখন প্রচণ্ড ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়-তুফানসহ নানা বিপর্যয় পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তখন প্রশ্নটি আমাদেরও করা উচিত: আমরা কোথায় বদলে গেছি? আমাদের কোন ভুলগুলো আল্লাহ আমাদের দেখাতে চাইছেন? কীভাবে আমরা ফিরে যাব আমাদের রবের দিকে?
হজরত ওমরের হৃদয় আল্লাহভীতিতে কেঁপে উঠেছিল, আজ আমাদের হৃদয়ে সেই কেঁপে ওঠার প্রয়োজন আরও বেশি।

১৮ ঘন্টা আগে
২






Bengali (BD) ·
English (US) ·