ভূমিকম্পে কাঁপল সারা দেশ, সারা দিন যা যা ঘটল

২ দিন আগে
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে গোটা বাংলাদেশ। রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে তুলনামূলক কাছাকাছি–নরসিংদীর মাধবদী এলাকায়।

দেশের সাম্প্রতিককালের অন্যতম তীব্র এই কম্পনে ভবন ধস, দেয়াল চাপা পড়া এবং আতঙ্কিত হয়ে লাফ দেয়ার ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা নাগাদ বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ৬ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।
 

মৃত্যু ও হতাহতের চিত্র
 

ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে শিশু, শিক্ষার্থী এবং পথচারী রয়েছেন।
 

ঢাকা: এখন পর্যন্ত রাজধানীতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলী এলাকায়, যেখানে একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ভেঙে রাস্তায় চলাচলকারী তিন পথচারী নিহত হন। নিহতদের মধ্যে বাবা-ছেলে–হাজি আব্দুল রহিম (৪৭) ও মেহরাব হোসেন রিমন (১৩)–এবং সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাফি রয়েছেন। এ ছাড়া মুগদার মদিনাবাগ এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের রেলিং ধসে মাথায় পড়ে একজন নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু হয়।
 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের কেন্দ্র নরসিংদীতে কেন?
 

নরসিংদী: ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদী জেলায় চারজন নিহত হয়েছেন। গাবতলী এলাকায় বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে একটি শিশু এবং পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বাবা মারা যান। এ ছাড়া মাটির ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে একজন বৃদ্ধ এবং গাছ থেকে পড়ে এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন।
 

নারায়ণগঞ্জ (রূপগঞ্জ): রূপগঞ্জের গোলাকান্দাইল এলাকায় ভূমিকম্পের সময় দেয়াল ধসে ১০ মাস বয়সি শিশু ফাতেমার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
 

আহত: স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা, নরসিংদী ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে ছয় শতাধিক আহত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আহতদের মধ্যে আতঙ্কিত হয়ে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া এবং তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে আহত হওয়া পোশাক কারখানার শ্রমিকরা রয়েছেন।
 

ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বিদ্যুতের বিভ্রাট


ভূমিকম্পের প্রভাবে দেশের অবকাঠামোতেও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে।
 

ভবন ধস ও ফাটল: পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়েছে এবং অনেক স্থাপনায় নতুন করে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের তৎপরতায় কয়েকটি ধসের সংবাদে দ্রুত সাড়া দেয়া হয়।
 

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে থাকতে কী করবেন?
 

বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত: ভূমিকম্পের ফলে ৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বা আংশিকভাবে কমে আসে। এর প্রভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে এবং লোডশেডিং বেড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রের মধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রও রয়েছে।


বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পটি বাংলাদেশে আরও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ‘আগাম বার্তা’ হতে পারে। তারা অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া এবং বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণের ওপর জোর দিয়েছেন।


ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য সরকারি কন্ট্রোল রুম চালু করে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন