ভূমিকম্প: না পূর্বাভাস-না প্রস্তুতি; মুহূর্তেই সব শেষ, কারণ কী?

১ দিন আগে
প্রকৃতির এক ভয়াল রূপ ভূমিকম্প। এক মুহূর্তেই সবকিছু গুঁড়িয়ে দিতে পারে এই কম্পন। না থাকে কোনো পূর্বাভাস, না থাকে প্রস্তুতির কোনো সময়। যে কোনো সময়, যে কোনো জায়গায় হঠাৎ করেই আঘাত হানতে পারে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যে ধ্বংস করে দিতে পারে আস্ত একটি শহর।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে সারা দেশে অনুভূত হলো এমনই শক্তিশালী এক ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫.৭, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। এ সময় অনেকেই আতঙ্কে ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। দুপুর পর্যন্ত ভবন ধ্বংসে বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর খবর জানা গেলেও ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।


কিন্তু কেন এই হুট করে কেঁপে ওঠে মাটি? কেনই-বা সেই কম্পন থেকে তৈরি হয় ভূমিকম্পের মতো মহাবিপর্যয়?


সহজ ভাষায় ভূমিকম্প হচ্ছে পৃথিবীর কাঁপুনি। এর কারণ লুকিয়ে আছে মাটির নিচে বহু কিলোমিটার গভীরে থাকা শিলার স্তরে বা টেকটোনিক প্লেটে। এই শিলাগুলো যদিও সবসময় নড়াচড়া করে না, তবে মাঝেমধ্যে একটি শিলা অন্য শিলার ওপর প্রবল চাপ তৈরি করে। আর সেই চাপ সহ্য করতে না পেরে হঠাৎ সরে যায় একটি স্তর। ঠিক তখনই কেঁপে ওঠে মাটি, সৃষ্টি হয় ভূমিকম্পের।


জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বছরে গড়ে প্রায় ৬,০০০ ভূমিকম্প হয় পৃথিবীতে। তবে বেশিরভাগই এত মৃদু হয় যে সাধারণ মানুষ তা টেরই পায় না।
 

আরও পড়ুন: শক্তিশালী ভূমিকম্পে দেশের কোন অঞ্চল বেশি ঝুঁকিতে, জানালো আবহাওয়া অধিদফতর


ভূমিকম্পের প্রকারভেদ


ভূমিকম্পের তীব্রতা ও উৎপত্তিস্থলের গভীরতা অনুযায়ী এটিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়:


কম্পন অনুযায়ী:


প্রচণ্ড: রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৬ বা তার বেশি।

মাঝারি: রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৪ থেকে ৫.৯ পর্যন্ত।

মৃদু: রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৩ থেকে ৩.৯ পর্যন্ত।
 


উৎপত্তিস্থলের গভীরতা অনুযায়ী:


অগভীর: ভূপৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে।

মধ্যবর্তী: ৭০ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে।

গভীর: ৩০০ কিলোমিটারের নিচে।
 

ভূকম্পনের মূল কারণ


ভূমিকম্পের পেছনে রয়েছে মূলত তিনটি কারণ:

১. শিলার স্তর সরে যাওয়া: মাটির নিচের শিলার স্তর হঠাৎ করে চাপ সহ্য করতে না পেরে সরে যাওয়া।

২. আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ: আগ্নেয়গিরির প্রবল অগ্ন্যুৎপাতের সময় সৃষ্ট কম্পন।

৩. ফাটল দিয়ে গ্যাস বের হওয়া: মাটির ফাটল দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভূপৃষ্ঠের ভেতরের অংশে ফাঁকা স্থান তৈরি হয়। সেই ফাঁকা স্থান পূরণ করতে পৃথিবীর উপরের তল দেবে গিয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে, যার কারণে প্রবল কম্পন অনুভূত হয়।


ভূমিকম্পের স্থায়িত্ব হয় মাত্র কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু এই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তৈরি হয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির আশঙ্কা।

আরও পড়ুন: ভূমিকম্পের আগে কোনো সতর্ক সংকেত পাওয়া যায়?


বাংলাদেশ কেন উচ্চ ঝুঁকিতে?


বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান তিনটি বড় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে–ভারতীয় প্লেট, ইউরেশীয় প্লেট ও বার্মা মাইক্রোপ্লেট। এই তিন প্লেটের ক্রমাগত ঠেলাঠেলি, চাপ আর সংঘর্ষের কারণে বরাবরই দেশটি ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে মধুপুর ফল্ট, ডাউকি ফল্ট ও চট্টগ্রাম অঞ্চল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।


বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি রাজধানী ঢাকা শহরে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে পুরান ঢাকার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভবন ভেঙে পড়তে পারে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাত্র এক শতাংশ ভবন ভাঙলেই মানুষের মৃত্যু তিন লাখে ছড়িয়ে যেতে পারে। নতুন ঢাকার ঝুঁকি কম হলেও পুরোনো ভবন, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং দুর্বল নির্মাণ কাঠামোর কারণে সামগ্রিক ক্ষতির আশঙ্কা কোটি কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন