হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও রেলপথে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ও সহজ হওয়ায় কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানোয় উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, ভ্রমণসহ নানা কাজে প্রতিদিন এ পথ দিয়ে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করতেন। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয় ভারত। আগে যাদের ভিসা ছিল, মেয়াদ ছিল তারাই যাতায়াত করতেন এতদিন।
এদিকে ভিসা বন্ধ থাকায় সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে হিলি বন্দর ব্যবহারকারী আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।
সমস্যার কথা জানিয়ে আমদানিকারক মাহবুব রহমান বলেন, ‘আমরা যারা ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য করে থাকি তাদের জন্য ভিসা অনেক জরুরি। কারণ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ভারতের সঙ্গে। যে কোনো পণ্য আমদানি করার পূর্বে সেগুলো দেখেই খরিদ করতাম। এখন আমাদের মোবাইলের ছবি দেখে পণ্য খরিদ করতে হচ্ছে। ছবি দেখে পণ্যের গুণগত মান ঠিক বোঝা যায় না। গত মাসে আমি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে খৈল আমদানি করি বন্দরে আসার পর দেখি খৈলের গুণগত মান অনেক খারাপ, বেশ কয়েকদিন ভারতীয় ট্রাক থেকে খৈলগুলো খালাস না করে বন্দরে ফেলে রাখতে হয়। ভারতীয় রফতানিকারকের প্রতিনিধি আসার পরে সমাধান করতে হয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেক লোকসান গুনতে হয়েছে। আমার এভাবেই প্রতিটা আমদানিকারককে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ভিসা না থাকার কারণে। যার কারণে দিন দিন আমদানি বাণিজ্য কমে যাচ্ছে হিলি বন্দরে।’
আরও পড়ুন: হিলি স্থলবন্দরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
আরেক আমদানিকারক নুর ইসলাম বলেন, ‘সরকার পরিবর্তনের পর থেকে ভারত আমাদের ভিসা দিচ্ছে না। আমরা যারা আমদানিকারক, তাদের সরেজমিন পণ্য দেখে কিনতে হয়। তারপর সেগুলো আমদানি করতে হয়। কিন্তু এখন ভিসা না থাকায় ফোনে কথা বলে পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় রফতানিকারকরা ফোনে যে পণ্যের কথা বলছে, সেটি রফতানি করছে না। অনেক পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হয়। ভারত সরকারের প্রতি অনুরোধ, যেন বিজনেস ভিসা দেওয়া হয়। আমরা ভারতে গিয়ে পণ্য দেখে আমদানি করতে চাই।’
সুফিয়া নামের এক বাংলাদেশি বলেন, ‘আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন ভারতে রয়েছেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতে কিংবা বেড়াতে যাব। কোনোটিই সম্ভব হচ্ছে না। ভারত ভিসা বন্ধ করে রাখায় আমরা যেতে পারছি না। আবার ভারতীয় নাগরিক ঠিকই আমাদের দেশের ভিসা পাচ্ছে। তারা বাংলাদেশে ঘুরে যাচ্ছে। এটি আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করছে ভারত।’
মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে যাওয়া সুমন বলেন, ‘আমার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। সপ্তাহে দুবার ডায়ালাইসিস করতে হয়। আমি এর আগে ভারতে চিকিৎসা করেছিলাম। কিন্তু ভিসা না থাকায় বেশ কিছুদিন যেতে পারিনি। মাঝে স্ট্রোক করে ঢাকায় ১৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। এরপর দীর্ঘ চারমাস ধরে ভিসার জন্য কষ্ট ভোগ করলাম। সে ভিসা পেতেও খরচ হয়েছে অনেক।’
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, আগে প্রতিদিন হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে গড়ে ৬৫০ থেকে ৭০০ পাসপোর্ট যাত্রী পারাপার হয়েছে। এখন শুধুমাত্র মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসায় যাত্রী পারাপার করছে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া অর্ধ লক্ষ টাকা মালিককে ফিরিয়ে দিলো দুই কিশোর
হিনি আরও বলেন, ‘হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে গত আগস্ট থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৭০ হাজার ৩৪৬ জন যাত্রী পারাপার করেছেন। যেখানে একই সময়ে সেই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৬৫ হাজার ৪৭৫ জন। বর্তমানে ১২০ থেকে ১৫০ জন যাত্রী যাতায়াত করছেন। তবে যেসব যাত্রী যাওয়া আসা করছে তার মধ্যে গড়ে ৮০ জনই ভারতীয় যাত্রী বাংলাদেশে আসছে।’
যাত্রী পারাপার কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমেছে বলে জানান হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিকুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা ভ্রমণকর বাবদ আদায় হতো। কিন্তু এখন ভিসা সীমিত হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা ভ্রমণকর আদায় হচ্ছে। তবে ভারত ভিসা দেওয়া শুরু করলে যাত্রী যাতায়াত বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আদায়।’