মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৪৬২ নাম্বার রুমে ছুরিকাঘাতের শিকার হন রবিউল হক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় সহপাঠীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের রোষানল এড়াতে নিজ কক্ষে আবদ্ধ ছিলেন জালাল আহমদ। পরে প্রক্টর এবং হল প্রভোস্টের সহায়তায় তাকে শাহবাগ থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, হল প্রশাসন এরইমধ্যে বাদী হয়ে জালাল আহমদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে। এখন মামলার পরবর্তী প্রক্রিয়ায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী চলবে।
আরও পড়ুন: রুমমেটকে কোপালেন ডাকসুর ভিপি প্রার্থী
এ ঘটনার পর জালাল আহমদের ডাকসুর ভিপি প্রার্থীতা থাকবে কিনা জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, তার প্রার্থীতা থাকবে কি থাকবে না সেটা নির্বাচন কমিশন তাদের বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
জালাল আহমদের বিরুদ্ধে আগের একাধিক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছে এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না। তবে আজকের ঘটনার পর সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হবে।
হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, আমি নিজেও শিক্ষার্থীদেরকে দেখেছি হল প্রশাসন বিশেষ করে প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছে। তবে তারা যদি বুধবার কোনো এক সময়ে উপাচার্যের সঙ্গে বসে তাদের দাবি দাওয়া পদ্ধতিগতভাবে জানায়, সেক্ষেত্রে তাদের দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ঘটনা ডাকসুর নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়েছে প্রক্টর বলেন, আজকের রাতের ঘটনা ডাকসু কেন্দ্রিক বলে আমার কাছে মনে হয়নি। কাজেই এই ঘটনা ডাকসুর নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না।
আরও পড়ুন: রুমমেটকে ছুরিকাঘাত: জালালকে পুলিশে দিলো প্রশাসন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাকবিতণ্ডার জেরে রবিউলের রুমমেট জালাল আহমদ তাকে আঘাত করেন। রবিউলকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে পুরো হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জালাল রুমে আছে জানতে পেরে প্রায় দুই-তিন শতাধিক শিক্ষার্থী তার রুমের সামনে ভিড় করে। এদের মধ্যে অনেকে দরজা ভেঙে রুমে ঢোকার চেষ্টা করলেও মুহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ সিরাজুল তাদের শান্ত করেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জালালকে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি দেন।
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুহসীন হলের প্রভোস্ট সময় সংবাদকে বলেন, ‘হলে যে আমরা মনোবিদ আনি তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে ওর মানসিক সমস্যা আছে। তবে তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কাউকে আঘাত করার মতো কিছু হবে না।
এর আগেও জালালের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ ছিল হলের শিক্ষার্থীদের। রবিউল নিজেই দুইবার প্রভোস্ট বরাবর আবেদন করেছিলেন। এছাড়া তার রুমের আশেরপাশের ৩৫ জন শিক্ষার্থী জালালকে হল থেকে অপসারণের জন্য প্রভোস্ট বরাবর লিখিত আবেদন করে৷ সেই অভিযোগের পরেও জালালকে কেন রাখা হয়েছে, এর প্রেক্ষিতে প্রভোস্ট বলেন, ‘ওর তো বৈধ ছাত্রত্ব আছে।’
জালালকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়ার পর প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় হল প্রভোস্টের ব্যর্থতার জন্য তার পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দেন তারা।
২০১৮-১৯ সেশনের আব্দুল্লাহ তানভীর সময় সংবাদকে বলেন, ‘এর আগেই প্রভোস্টকে অনেকবার এই বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। আজকের এই ঘটনার দায় তার। তার হাতে সুযোগ ছিল এই ঘটনা সামাল দেয়ার। যেহেতু সে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা তার পদত্যাগ চাই।’
]]>