ভারতের বিমানবন্দরে দুবাইয়ের শীর্ষ ব্যবসায়ীকে হেনস্তা

৩ সপ্তাহ আগে
ভারতের জয়পুর বিমানবন্দরে হেনস্তার শিকার হয়েছেন দুবাইয়ের খ্যাতনামা ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ। ব্যক্তিগত ব্যবহারের একটি রোলেক্স ঘড়ির জন্য বিমানবন্দর কর্মীরা তাকে হয়রানি করেছেন। এ ঘটনা প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে গালফ নিউজ।

ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত দুবাইয়ের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং রিগাল গ্রুপের চেয়ারম্যান ৮৪ বছর বয়সি বাসু শ্রফ গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় জয়পুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে হয়রানির শিকার হন।

 

খবরে বলা হয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রপতির দেয়া মর্যাদাপূর্ণ ‘প্রবাসী ভারতীয় সম্মান’ পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রফ কাস্টমস কর্মকর্তাদের কাছে রোলেক্স ঘড়িটি ব্যক্তিগত বলে জানান। এমনকি শুল্ক কর্মকর্তাদের কাছে ঘড়ির আসল রসিদ ও শংসাপত্রও উপস্থাপন করেন। তার ইচ্ছে ছিল, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও মন্দির উদ্বোধনের সময় তিনি ঘড়িটি পরবেন এবং তারপরে এটি নিয়ে দুবাই ফিরবেন।

 

শ্রফের আইনজীবীর মতে, আলোচিত রোলেক্স ঘড়িটি ছিল একটি বিলাসবহুল ঘড়ি যার মূল্য প্রায় ৩৫ লক্ষ রুপি (প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার দিরহাম)। শ্রফ জানিয়েছেন, কাস্টমস কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে ঘড়ি পাচারের চেষ্টার অভিযোগ আনেন। এরপর তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয় যা সাধারণত অপরাধী ও চোরাচালানকারীদের সঙ্গে করা হয়।

 

ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ বলেন, দুইদিনের সফরে আমি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মাসহ কয়েকজন ভিআইপির সঙ্গে দেখা করতে এবং একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জয়পুর যাই। কিন্তু বিমান থেকে নামার মুহূর্ত থেকেই সফরটি হতাশাজনক হয়ে ওঠে।

 

আরও পড়ুন: কাশ্মীর হামলায় অভিযুক্ত দুজনের বাড়ি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়া হলো

 

হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা এই ব্যবসায়ী বলেন, বিমান থেকে নামার পর একজন সাহায্যকারী যখন আমার ব্যাগেজসহ হুইলচেয়ারটি ঠেলে নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তাকে থামিয়ে পাসপোর্ট দেখাতে বলেন। তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন সে আমার পাসপোর্ট চাইছে। এ সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমার রোলেক্স ঘড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন, এটি ‘ঘোষণা’ ছাড়া নেয়া যাবে না।

 

ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘এ কথা শুনে আমি তো অবাক। এ সময় আমি ডিক্লারেশন কাউন্টার খুঁজতে চারপাশে তাকালাম। কিন্তু আমি অবাক হলাম, বিমানবন্দরে কোনো সঠিক ডিক্লারেশন পয়েন্ট ছিল না। তখন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমাকে ৫x৩ ফুটের একটি ছোট ডেস্কের দিকে নির্দেশ করে বললেন, ওখানেই জিনিসপত্র ঘোষণা করা হয়।’

 

তিনি জানান, এরপর যা ঘটেছে তা আরও হতাশাজনক। বিমানবন্দরে পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করানো হয়। তিনি বলেন, ‘জয়পুর বিমানবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দিরে মধ্যরাতের আগে আমাকে পৌঁছাতে হবে। তাই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে দ্রুত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য করেন।’

 

তিনি বলেন, শুধু অপেক্ষাতেই কষ্ট দেয়নি, তাদের আচরণও আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে যেন আমি একজন অপরাধী। তিনি আরও বলেন, দুবাইতে আমার সঙ্গে সবসময় সম্মানের সহিত আচরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে আমার নিজের দেশে, এমন আচরণ করা হয়েছে মনে হচ্ছিল আমি কিছু ভুল করেছি।

 

আরও পড়ুন: পহেলগামে কেন সেনা ছিল না, প্রশ্ন রাহুলের

 

ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ দুবাইয়ের ইন্ডিয়া ক্লাব ও ইন্ডিয়ান হাই স্কুলের চেয়ারম্যানও। বাসু শ্রফের আইনজীবী ধর্মেন্দ্র সিং বলেন, ‘ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বাসু শ্রফের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা কেবল অন্যায্যই নয়, অসম্মানজনক ছিল।’

 

আইনজীবী আরও বলেন, ১৪ এপ্রিল ব্যবসায়ী শ্রফ যখন দুবাই ফিরে আসছিলেন তখন তার সহকারী ঘড়িটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ১০ হাজার রুপি দাবি করেন, যা অযৌক্তিক। অথচ লকার ফি বাবদ বৈধ চার্জ মাত্র ৩০ রুপি।

 

সিং বলেন, শ্রফের পরা রোলেক্স ঘড়িটির মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ রুপি। ভারতীয় শুল্ক আইন অনুসারে, যথাযথ ঘোষণা ছাড়া দেশে আনা বিলাসবহুল জিনিসপত্রের ওপর প্রায় ৩৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে, যা এই ক্ষেত্রে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন রুপি হবে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরিবর্তে, বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা মাত্র ১০ হাজার রুপি দাবি করেন, যার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

 

আইনজীবী ধর্মেন্দ্র সিংকে পাওয়ার অ্যাটর্নি দিয়ে ১৪ এপ্রিল ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ রোলেক্স ঘড়ি ছাড়াই দুবাই ফিরে যান। আইনি লড়াই শেষে ১৯ এপ্রিল ঘড়িটি উদ্ধার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যান তিনি। 

 

আরও পড়ুন: জম্মুতে বন্ধ হলো ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন