এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কে এখন নতুন রসায়ন। দীর্ঘদিনের টানাপোড়েন আর অবিশ্বাসের ছায়ায় ঘেরা সম্পর্ক ভুলে বন্ধু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দেশ দুটি।
সম্প্রতি তিয়ানজিনে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেদেরকে 'প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, অংশীদার' হিসেবে ঘোষণা করেন। বাণিজ্য, যোগাযোগ ও পারস্পরিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেন তারা। বছরের পর বছর ধরে উত্তেজনা চলার পর এ পরিবর্তন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আলোড়ন তুলেছে।
এদিকে গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বৈদেশিক নীতিতে ভারতের সঙ্গে খানিকটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে চীন ও পাকিস্তান যখন ক্রমেই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে, ঠিক সেই সময় বেইজিং-নয়াদিল্লির এ ঘনিষ্ঠতা ঢাকার পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে কিনা এ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে কূটনৈতিক অঙ্গনে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের জন্য বিষয়টি কেবল খবর নয় কৌশলগত সংকেতও বটে। ভারত–চীনের এ নতুন মেরুকরণ বাংলাদেশের জন্য একইসঙ্গে ঝুঁকি এবং সুযোগ-দুই দিকই তৈরি করছে।

সম্প্রতি তিয়ানজিনে শাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ আরও অনেকে ফটোসেশনে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কৌশল অবলম্বন করে বেশ সতর্কভাবে এগোতে হবে। সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ভারতের সঙ্গে স্থিতিশীলতা বজায় রেখে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কও জোরদার করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ত্রিমুখী সম্পর্ক-তখন টক, ঝাল ও মিষ্টি এর মধ্যে দিয়েই যাবে। যখন যার সাথে যে বিষয়ে সম্পর্ক রাখা দরকার ঠিক তখন সেভাবেই রাখতে হবে। সতর্কতার সাথে আমরা আমাদের যে উদ্দেশ্য আছে সকলের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা, আমাদের স্বার্থে সেই কাজটা করতে হবে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, প্রতিটি দেশই নিজস্ব একেকটি মেরু তৈরি করতে চাইছে। এই পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে 'পেশাদারিত্বের' সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ তার। পররাষ্ট্রনীতিতে রাজনৈতিক স্বার্থের চেয়ে বাণিজ্য, অবকাঠামো ও বিনিয়োগের বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার কথাও বলেন তিনি।
ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, পৃথিবী একটি পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থার দিকে যাচ্ছে, সেটা থামানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ কিভাবে এই মাল্টিপোলারকে তার স্বার্থে নিয়ে আসবে সেই কাজটা আমাদেরই করতে হবে। যদি পেশাদারিত্ব বাড়াতে পারে তাহলে ওই যে মাল্টিপোলার যেটা, সেখান থেকে সে (বাংলাদেশ) বড় আকারে কিন্তু লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।

তবে ভারত–চীনের এই বন্ধুত্ব কতটা স্থায়ী হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কূটনীতির এই পরীক্ষায় ভারসাম্য ধরে রাখাই হবে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
]]>