ভরা মৌসুমেও চালের বাজারে অস্থিরতা, নওগাঁয় অভিযানে বের হচ্ছে মজুতের পাহাড়

৪ সপ্তাহ আগে
ভরা মৌসুমে চালের সংকট না থাকলেও নওগাঁর পাইকারি মোকামে মাসজুড়েই অস্থির চালের দাম। মৌসুমের শুরুতে কম দামে ধান কিনে মজুত করায় তৈরি হয়েছে কৃত্রিম সংকট। মিল পর্যায়ে অভিযানে বের হচ্ছে মজুত করা ধান ও চাল। কৃষক নেতারা বলছেন, মাসজুড়ে ব্যবসায়ী ও মিলারদের এ মজুত প্রক্রিয়ায় ভোক্তার পকেট কেটেছে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা।

চালের ভরা মৌসুম। তাই বস্তায় বস্তায় চাল ও ধানে ঠাসা মিলের গুদাম। তবে মাস জুড়েই বাজারে অস্থির চালের দর। নওগাঁর মোকামে বস্তাপ্রতি দর বেড়েছে ৪শ থেকে ৫শ টাকা পর্যন্ত। যদিও গেলো বোরো মৌসুমে জেলায় ধানের ভালো ফলন ছিল। তারপরও হঠাৎ চালের বাড়তি দরে বিপাকে ভোক্তারা।

 

কৃষি বিভাগ বলছে, গত বোরো মৌসুমে জেলায় ১২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান থেকে ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল পাওয়া যায়। এসব ধান চাষির হাত বদল হয়ে মিল পর্যায়ে এনে বাজারজাত করেন মিলাররা। চলতি মাসে প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত।

 

আরও পড়ুন: চালের বাজারে ভোক্তা অধিকারের অভিযান, সাড়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা

 

ভোক্তাদের অভিযোগ, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অধিক মুনাফার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, প্রতি কেজিতে চালের দাম ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। যা অস্বাভাবিক। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।

 

জেলার অব্যবহৃত মিলগুলো ধান ও চাল মজুতের ডিপো হিসেবে ব্যবহার করছেন মিলার ও ব্যবসায়ীরা। চালের বাড়তি দরের লাগাম টানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মজুত বিরোধী অভিযানে নেমেছে। অভিযানে মিলগুলোতে বের হচ্ছে বিপুল ধান ও চালের মজুত।

 

মাসজুড়ে চলা চালের অস্থির বাজারে ভোক্তার কাছ থেকে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা শুধু নওগাঁর মোকামের মিলারদের পকেটে গেছে বলে মনে করছেন কৃষি বিশ্লেষকরা। নওগাঁর কৃষক নেতা মো. জয়নাল আবেদিন মুকুল বলেন, কৃষকরা একদিকে ধান চাষ করে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা ধান থেকে চাল বানিয়ে কোটি কোটি আয় করছে।

 

নওগাঁ সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোজাফফর হোসেন বলেন, করপোরেট ব্যবসায়ীরা মিলারদের ব্যবহার করে পুরো ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

 

গত বোরো মওসুমে অনুকূল আবহাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে বলছে কৃষি বিভাগ। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম আযাদ বলেন, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও রোগবালাই গত বছরের চেয়ে কম হওয়ায় চলতি বছর প্রায় ৮ লাখ ৭১ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়েছে।

 

আরও পড়ুন: চালের বাজারে সরকারের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে: খাদ্য উপদেষ্টা

 

তবে চালের দর বাড়ানোর খোঁড়া যুক্তি ব্যবসায়ীদের। নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান খোকা বলেন, যারা করপোরেট ব্যবসা করে তাদের রেট অনেক বেশি। যারা এমআরপি লিখে বিক্রি করছে। অথচ মিলের রেট অনেক কম।

 

জেলা প্রশাসন বলছেন, মজুত ভাঙতে প্রশাসন তৎপর রয়েছে। নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল বলেন,  সুযোগ সন্ধানী ধান চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন কাজ করছে

 

জুন-জুলাই মাসে জেলার মিল পর্যায়ে মজুত বিরোধী ১৭টি অভিযানে অতিরিক্ত ধান ও চাল মজুতের কারণে ৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা মিলারদের জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন