ভরা মৌসুমে খুচরা বাজারে হঠাৎ করে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে চাল। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতারা আক্ষেপ করে বলেন, সব ধরনের চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই বাজারে এই অবস্থা।
বাজার ঘুরে জানা যায়, দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি মোটা চালে ২-৩ টাকা, আর সরু চালে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে দাম। বিক্রেতাদের দাবি, প্রতি বস্তায় অন্তত ৪০০ টাকা বেড়ে গেছে। বেশি দামে কিনে, কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বোরো মৌসুমেও স্বস্তি নেই, হঠাৎ চালের দাম বাড়ায় বিপাকে ভোক্তারা
হঠাৎ করে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হলেও বিক্রেতারাই বলছেন, বাজারে চালের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। বাড়েনি চাহিদাও। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিকের মজুরি বাড়ার তথ্যও নেই তাদের কাছে। চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, ঈদের পরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম। অথচ বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে।
ঠিক কত টাকা খরচ বেড়েছে সেই তথ্য বিক্রেতারা জানাতে না পারলেও, কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে কেন চাল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাকে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মিল মালিকদের দাবি, হঠাৎ করে ধানের দাম বৃদ্ধির মাশুল গুনতে হচ্ছে চালের বাজারের ভোক্তাদের।
বাংলাদেশ অটো, মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি বলেন, বহু মানুষ স্টক বিজনেসের নাম করে ধান, গম, ভুট্টাসহ নানা খাদ্যশস্য মজুত করছে। ফলে তাদের কাছ থেকে ধান কিনতে বাধ্য হচ্ছে মিলাররা। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে।
আরও পড়ুন: ফের চড়েছে চালের বাজার, নেপথ্যে কী?
এ অবস্থায় ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে সরকারি তদারকি বাড়ানোর পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, কিছু অসাধু চালকল মালিক, বড় ব্যবসায়ী ও করপোরেট হাউজের মালিকদের কারসাজিতে অস্থির হয়েছে চালের বাজার। সরকার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করলে বাজারে চালের অবৈধ মজুত কমবে। দামও কমে আসবে।
ধান চালের বাজার অস্থিতিশীল করার প্রমাণ পেলে কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। তিনি বলেন, চালকলগুলো খাদ্য অধিদফতরের আইনের ব্যত্যয় ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি পাইকার, সরবরাহকারীসহ খুচরা ব্যবসায়ীরাও যদি বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর হবে ভোক্তা অধিকার।
খাদ্য অধিদফতরের হিসাবে, দেশে বর্তমানে খাদ্যশস্য মজুত আছে ১৬ লাখ ৭১ হাজার টন। যার মধ্যে চালের মজুত পৌনে ১৩ লাখ টন।
]]>