তারাও মানুষের মতো ভালো খারাপ হয়ে থাকে। একজন মানুষ যেমন অন্য মানুষের ক্ষতি করতে পারে তেমনই একজন জিনও মানুষের ক্ষতি করতে পারে।
জিনদের বদনজর মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জিনদের অশরীরি স্পর্শ মানুষের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া জিনরাও যাদু করতে পারে। মানুষদের জিনিসও চুরি করতে পারে।
জিন কর্তৃক মানুষের অর্থ-সম্পদ চুরি করার পক্ষে আলেমগণ হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি হাদিস তুলে ধরেন। যখন তিনি যাকাতের খাদ্যদ্রব্য পাহারায় নিয়োজিত ছিলেন; তখন শয়তান কর্তৃক তা চুরি করার লম্বা এ ঘটনাটি হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে।
কোরআনে জিনদের ভালো মন্দের ব্যাপারে বলা হয়েছে, (জিনরা বলে) আমাদের কেউ কেউ সৎকর্ম পরায়ণ এবং কেউ কেউ এরূপ নয়। আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথে বিভক্ত। (সুরা জিন : আয়াত ১১)
জিনদের অনিষ্টের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
إن للجن والشياطين لذة في الشر والفتن، يحبون ذلك وإن لم يكن فيه منفعة (الفُرقان بينَ الحقِّ والباطلِ)
জিন-শয়তানরা অনিষ্ট সাধন এবং ফেতনা সৃষ্টি করে মজা পায়। তারা এটা করতে পছন্দ করে। যদিও এতে তাদের কোনো উপকার না থাকে। (আল ফুরকানু বাইনাল হাক্বি ওয়াল বাতিল)
জিনের ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
জিনের চুরি ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা রয়েছে। তাতে ওঠে এসেছে-
আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা
أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ، مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ
উচ্চারণ : ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রজিম; মিনহামযিহি ওয়া নাফখিহি ওয়া নাফছিহি।’
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে তার প্ররোচনা ও ফুৎকার থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
আরও পড়ুন: যেভাবে কবর জিয়ারত করবেন
জিন-শয়তান থেকে বেঁচে থাকার মাসনুন আমল
বাড়িতে প্রবেশ করতে দোয়া পড়া। তাহলে শয়তান বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না আর ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে ঘরের মূল্যবান মালামাল সিন্দুক বা সংরক্ষিত কোনও স্থানে রেখে তার মুখ বন্ধ করা। তাহলে শয়তান বন্ধ মুখ খুলে তা চুরি করতে পারবে না। হাদিসে এসেছে.
إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قالَ الشَّيْطَانُ: لا مَبِيتَ لَكُمْ، وَلَا عَشَاءَ
‘যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশের সময় ও খাবারের সময় আল্লাহকে স্মরণ করে তখন শয়তান (নিজ সঙ্গীদেরকে) বলে, তোমাদের রাত কাটানোর কোনো জায়গা নেই; তোমাদের রাতের কোনো খাবারও নেই।’ (মুসলিম)
জিন ও শয়তান থেকে হেফাজত থাকতে রাতের কিছু করণীয়ও রয়েছে। হাদিসে পাকে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন এভাবে,
غَطُّوا الإِنَاءَ وَأَوْكُوا السِّقَاءَ وَأَغْلِقُوا الْبَابَ وَأَطْفِئُوا السِّرَاجَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ لاَ يَحُلُّ سِقَاءً وَلاَ يَفْتَحُ بَابًا وَلاَ يَكْشِفُ إِنَاءً فَإِنْ لَمْ يَجِدْ أَحَدُكُمْ إِلاَّ أَنْ يَعْرُضَ عَلَى إِنَائِهِ عُودًا وَيَذْكُرَ اسْمَ اللَّهِ فَلْيَفْعَلْ فَإِنَّ الْفُوَيْسِقَةَ تُضْرِمُ عَلَى أَهْلِ الْبَيْتِ بَيْتَهُمْ
- তোমরা (রাতের বেলা) পাত্রগুলো ঢেকে দাও;
- মশকগুলো (চামড়ার তৈরি পানি রাখার পাত্র বিশেষ)-এর মুখ আটকিয়ে দাও;
- ঘরের দরজা বন্ধ করে দাও এবং
- চেরাগ (আলো) নিভিয়ে দাও।
কারণ, শয়তান মশকের বাঁধন খুলতে পারে না, দরজা খুলতে পারে না এবং পাত্রও উন্মুক্ত করতে পারে না। তবে তোমাদের কেউ পাত্র ঢাকার জন্য একটা কাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পেলে যেন তাই রাখে এবং সাথে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে- ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়ে নেয়। কেননা ইঁদুর চেরাগের আগুন থেকে লোকজনসহ বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।’ (মুসলিম)
সুতরাং রাতে পাত্র আচ্ছাদিত করা বা ঢেকে রাখা, মশকের মুখ আঁটকে দেওয়া, দরজা বন্ধ করা এবং এ সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা; ঘুমের সময় চেরাগের আগুন নিভিয়ে দেওয়া আর সন্ধ্যার পর শিশু ও গৃহপালিত জন্তুগুলোকে (বাড়িতে) আটকে রাখা উত্তম।
আরও পড়ুন: কন্যা সন্তান লাভের দোয়া
সকাল-সন্ধ্যার দোয়া ও জিকির পড়া। ঘরে সুরা বাকারা তেলাওয়াত করা। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ঘরে সুরা বাকারা পড়া হয়; শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। (মুসলিম)
বাড়িতে নফল নামাজ পড়া। সন্ধ্যার সময় আয়াতুল কুরসি পড়া যা শয়তান কর্তৃক জাকাতের খেজুর চুরির হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জিন ও শয়তান থেকে বেঁচে থাকতে সুন্নাহভিত্তিক আমল ও দোয়া যথাযথভাবে পড়া। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা।