ভরা বর্ষায়ও পানি নেই হাওরে, হুমকিতে জীবন-জীবিকা

১ দিন আগে
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অঞ্চল এক সময় দেশি প্রজাতির মাছের প্রাচুর্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। বর্ষাকালে পানিতে ভরে ওঠা এসব হাওর এলাকার মানুষের জীবিকা ও পুষ্টির প্রধান উৎস ছিল মিঠা পানির মাছ। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ভরা বর্ষাতেও আজ পানির দেখা নেই। এতে চরম সংকটে পড়েছেন হাওরবাসী। হুমকির মুখে হাওরপাড়ের জীবন-জীবিকা।

গত বছরের আগস্টে সুনামগঞ্জের হাওরগুলো ছিল পানিতে টইটম্বুর। অথচ চলতি বছর ভরা বর্ষায়ও সেই হাওরগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। উজানে এবং সিলেট অঞ্চলেও কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিপাত হয়নি, যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে হাওরের পানির স্তরে।


সুনামগঞ্জের ‘দেখার হাওর’ ঘুরে দেখা গেছে, যেখানে এ সময় নৌকা চলাচলের কথা, সেখানে এখন হাওরের তলদেশে ঘাস গজিয়েছে। পানি না থাকায় মৎস্যজীবীরা সারাদিন নৌকা ঘাটে বেঁধে বসে আছেন। কাজের ব্যস্ততা তো দূরের কথা, মাছ শিকারের সুযোগই নেই।


হাওরে মাছের অভাব এতটাই প্রকট যে, মিঠা পানির মাছের অন্যতম বড় বাজার লামাকাজির মাহতাবপুর মৎস্য আড়ত এখন প্রায় ফাঁকা। ছিটেফোঁটা কিছু ছোট মাছ আর খামারে উৎপাদিত মাছ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না। এতে করে হতাশ মাছ ব্যবসায়ীরা।


মাহতাবপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. বশির উদ্দিন জানান, বন্যা হলে হাওর-বিল পানিতে ভরে যায়, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন তো বর্ষা মৌসুমেও পানির দেখা নেই। ফলে মাছের আকাল দেখা দিয়েছে।


আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জুন ও জুলাই মাসে গড় বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ১ হাজার ৬৩৮ মিলিমিটার। কিন্তু এবার তা হয়েছে অর্ধেকেরও কম। উজানেও পানির প্রবাহ ছিল না বললেই চলে।


আরও পড়ুন: পর্যটক হারাচ্ছে চলনবিল, মাছের উৎপাদনেও ধসের শঙ্কা!


পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিলেট মৎস্য অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক শরীফুল আলম বলেন, পরিবর্তিত জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে মৎস্য অধিদপ্তর দ্রুত বর্ধনশীল মিঠা পানির মাছ পুকুর ও বিলে ছাড়ছে।


এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানিয়েছেন, ৬৪ জেলার খাল খননের একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে, যা হাওর অঞ্চলের পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে।


বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসাবে, সিলেট বিভাগে ছোট-বড় হাওরের সংখ্যা ৪২৩টি এবং বিলের সংখ্যা ৩ হাজার ১৬৭টি। এসব হাওর ও বিল থেকে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার ৭২ দশমিক ৯১ টন মাছ আহরণ হতো। কিন্তু এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকে। সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়, দেশের ৬৪টি মিঠা পানির মাছের প্রজাতির অধিকাংশ এখন বিলুপ্তির পথে।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন