এক সময় ভবদহ থেকে বারোহাটি বয়ে চলা নদীর প্রস্থ ছিল দেড় থেকে দুইশ মিটার। কিন্তু এখন সেটি নেমে এসেছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিটারে আর গভীরতা মাত্র ৩ থেকে ৫ ফুট। একই অবস্থা ভবদহ অঞ্চলের অন্যসব নদ-নদীরও। এতে প্রায় প্রতি বছরই নদীর দুই কূল ছাপিয়ে প্লাবিত হয় সমতল।
যেখানে সাধারণত সেচ দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে চাষাবাদ করা হয়, সেখানে এ অঞ্চলের কৃষকদের ফসল বাঁচাতে জমি থেকে পানি সরাতে ব্যবহার করতে হয় বৈদ্যুতিক পাম্প। এতেই আঁচ করা যায় কতটা দুর্বিষহ জীবন এখানকার বাসিন্দাদের।
নানান সময়ে লালফিতার দৌরাত্ম্য ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের প্রভাবে ভবদহের জলাবদ্ধতা নিরসন হয়নি। বহুবার এই জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও নানান শুভংকরের ফাঁকিতে ভবদহ বিল এখন যেন যশোরের মরণ ফাঁদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮১ সালের পর থেকেই মূলত এই জলাবদ্ধতার শুরু। ২১টি জলকপাটের মধ্যে ১৮টিতে পলি জমে বন্ধ হওয়ায় এখানকার নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। যদিও সাগরের লবণাক্ত পানি যাতে জনপদে আসতে না পারে এজন্য এসব জলকপাটের প্রয়োজনীয়তাও নেহায়েত কম নয়।
টিআরএম ২০২২ সালে ভবদহের স্লুইচগেটের পাশে পাওয়ার পাম্প বসায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেচ প্রকল্পের আওয়তায় এসব বসানো হলেও তেমন কোনো উপকারে আসছে না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতায় ভবদহে কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন বিপর্যস্ত, জীবনযাত্রা দুর্বিষহ
স্থানীয় সমাজসেবী জিন্নাত আলী বলন, ‘পানি নিয়ে যে ব্যবসা এখানে হয়েছে সেটা মেনে নেয়ার মতো না। জরুরি ভিত্তিতে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের কাজ, নদী খনন এবং পরিকল্পিত জনবান্ধব টিআরএম বাস্তবায়ন না করা গেলে এই জলাবদ্ধতা পিছু ছাড়বে না।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য কুমার পাল বলেন, আমডাঙ্গা খালকে বর্ধিত করে ভবদহের টেকা নদীর সঙ্গে সংযোগ দিতে হবে। পানি কোনোমতে যাওয়া শুরু করলে, পানি নিজেই জায়গা তৈরি করে নিবে।’
আরও পড়ুন: জলাবদ্ধতার দুঃখ কবে ঘুচবে ভবদহবাসীর?
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যনার্জী বলেন, ‘আগামী বছরের জুনের ভেতরে ভবদহের মানুষগুলো যে অন্ধকারে ছিল, কিছুটা হলেও আশার আলো দেখবে। অনিয়ম ঠেকাতে এবারের প্রকল্প সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হবে।’
যদিও নদী রক্ষা কমিশনের প্রধান সম্বনয়কারী জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘সেপ্টেম্বর থেকে ভবদহের আশপাশের নদীগুলোর খনন কাজ শুরু করে দিবো। কোনো জায়গায় ৩ মিটার আবার কোনো জায়গায় ৭ মিটার পর্যন্ত নদীর গভীরতা থেকে ডাউন রয়েছে। কাজেই এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান বেশ কঠিন হবে।’
]]>