রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরে প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় আন্দোলনকারীরা। এরপর বিকেল ৫টার পর থেকে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। এদিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের কারণে দুই পাশে অন্তত ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃস্টি হয়।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দুটি আসন সহ দেশের মোট ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। পরে এ নিয়ে তারা গত ৩০ জুলাই প্রাথমিক গেজেট প্রকাশ করেন। নতুন গেজেটে বিজয়নগর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন-হরষপুর, চান্দুরা ও বুধন্তী ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের মধ্যে যুক্তকরা হয়। পরে গত ২৪ জুলাই বিজয়নগর বাসীর অক্ষুন্নতার পক্ষে আবেদনের আপিল শুনানি হয়। আপিল শুনানির পর হরষপুর ইউনিয়নকে পূর্বের অবস্থায় রেখে বাকি দুটি ইউনিয়ন চান্দুরা, বুধন্তিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ বিজয়নগর উপজেলাবাসী ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে দুর্ভোগে পরেন মহাসড়কে চলাচলরত পরিবহনের যাত্রী চালকেরা।
দুর্ভোগের শিকার পরিবহন যাত্রী জাহিদুল ইসলাম জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মহাসড়কে আটকা পরে আমাদের অবস্থা নাজুক। প্রশাসন কি করছে আমরা তা জানি না । সরকারের উচিত ছিল জনগণের দুর্ভোগের বিষয় অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্যা সমাধান করা।
পরিবহন যাত্রী ও কলেজ শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান জানান, দেশে আইনশৃঙ্খলা আছে বলে মনে হচ্ছে না। দুই-তিন ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ থাকবে,আর তারা কোনো পদক্ষেপ নেবেন না, এটা হতে পারেনা।
ট্রাকচালক আবুল খায়ের জানান, ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে এসেছি হবিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে যাব। দুই ঘণ্টার উপর হয়েছে আটকা পড়ে আছি। জানি না কখন অবরোধ প্রত্যাহার হবে, আর আমরা গন্তব্যে পৌঁছাব।
বাসচালক মামুন মিয়া জানান,চালক যেমন দুর্ভোগে আছে, তার চেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছে যাত্রীরা এটা দুঃখজনক। দাবি থাকলে তাদের তারা অফিস, আদালত, নির্বাচন কমিশনে গিয়ে করতে পারে। মহাসড়কে অবরোধ করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কেন? তিনি প্রশ্ন রেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মো. আতাউল্লাহ জানান, বিজয়নগরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিসহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা দায়ী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তিনি তার সুবিধার জন্য বিজয়নগর উপজেলার দুটি ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন সরাইলের সাথে যুক্ত করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে বিএনপির হয়ে প্রতিবন্ধিতা করতে চাচ্ছেন। ভোটের অঙ্কের পাশাপাশি তার পৈতৃক নিবাস বুধন্তি ইউনিয়নের ইসলামপুর হওয়ায় তিনি দুদিক থেকে এর সুবিধা নিতে চাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসন পুনর্বিন্যাস: ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ
আতাউল্লাহ আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনে শুনানির দিন রুমিন ফারহানার বাহিনী আমার উপর হামলা করেন। বিজয়নগরকে অক্ষুণ্ন রাখার দাবি কোনো নির্দিষ্ট দলের নয়। এটি পুরো বিজয়নগরবাসীর দাবি। এই দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে আছি এবং থাকব।
বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়ন পুনঃবহালের দাবিতে গঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মো. ইমাম হোসেন জানান, গত ২৪ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার বিচ্ছিন্ন তিন ইউনিয়নের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিল শুনানি শেষে গত ৪ সেপ্টেম্বর হরষপুর ইউনিয়নকে পূর্বের অবস্থায় রেখে বুধন্তি এবং চান্দুরা ইউনিয়নকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের সাথে যুক্ত করা হয়। এতে বিজয়নগর বাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। তারা কোনোভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাথে যেতে চান না। তারা বিজয়নগরের সাথে অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৩ আসনের সাথে থাকতে চান। উপজেলাবাসীর দাবি না মানা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলন চলবে।
তিনি আরও বলেন, আজ বিকেলে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, এহসান মুরাদ (এডিএম) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাধনা চাকমা ঘটনা স্থলে এসে আমাদের দাবির বিষয়ে আশ্বাস দিলে আমরা আন্দোলন স্থগিত রেখে আজকের দিনের জন্য আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি। আমরা পরবর্তী সময়ে বিজয়নগরবাসীকে সাথে নিয়ে নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন করব।
বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম জানান, আন্দোলন এবং অবরোধ রোধ করার লক্ষ্যে মহাসড়কে থেকে কাজ করছেন তারা। আন্দোলনকারীরা যেন কোন ধরনের জ্বালাও পোড়াও না করতে পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর ছিলেন।
বিজয়নগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে বিচ্ছিন্ন দুটি ইউনিয়নের ভোটার সংখ্যা ৬০ হাজার।