বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সম্বলিত বিএনপির প্রচার-প্রচারণার ব্যানার ফেস্টুন খুলে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং সড়কের ডিভাইডারে লাগানো গাছগুলো সংরক্ষণের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করেন ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়, মেডিকেল সড়ক, নদী গবেষণা সড়ক, রাজবাড়ী রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন সড়কের ডিভাইডারে রোপণ করা গাছের ওপর ঝুলে থাকা ব্যানার ও ফেস্টুন অপসারণ করা হয়। এ কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ, মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন এবং সহ-মুখপাত্র উম্মে হাবিবাসহ অন্য সদস্যরা।
এ সময় তারা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণ করেন। তবে এ ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন বিএনপি ও দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের তোপের মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: এবার কোরবানির হাটে আসবে ২২ মণের ‘রাজাবাবু’
ওই দিন রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি বেনজির আহমেদ তাবরিজ।
তিনি লিখেন, ‘শহর পরিষ্কার করার নামে বিএনপির ব্যানার ফেষ্টুনে হাত দেয়া সহ্য করা হবে না। পাকনামি বেশি হয়ে যাচ্ছে, ফলাফল ভালো হবে না।’ এমন স্ট্যাটাসের পরপরই বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলার মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন বলেন, ‘শহরে যেভাবে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে তাতে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। মূলত সৌন্দর্য বজায় রাখতে এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ব্যানার-ফেস্টুন খোলা হয়েছিল। কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে নয়। আমরা বুঝতে পারিনি এটাকে রাজনৈতিকভাবে নেয়া হবে। আমাদের এই অপসারণের সাথে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নেই।’
এদিকে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণের প্রতিবাদে জেলা যুবদলের আয়োজনে শনিবার (১৭ মে) দুপুরে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সংগঠনটি। ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয় এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. রাজিব হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনসহ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘এনসিপি গঠনের পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সমন্বয়ক বলতে কিছু নেই। দলটির ফরিদপুরে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। এরা আ.লীগকে পুনর্বাসন করতে গত এক সপ্তাহ ধরে ফরিদপুর শহরে কিছু ব্যক্তি তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিএনপির ব্যানার-ফেস্টুন খুলে ফেলেছে। এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এনসিপি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আরেকটি সংগঠনের ব্যানার-ফেস্টুন খোলার অধিকার রাখে না। ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুন: নগরভবনে আসিফ মাহমুদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করলেন ইশরাকের সমর্থকরা
এদিকে এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিএনপির প্রতি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব সোহেল রানা।
তিনি বলেন, ‘এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক ও পরিকল্পিত কিছু না। আমরা চাই শহর পরিষ্কার থাকুক। তারপরও এটাকে রাজনৈতিকভাবে নেয়া হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমরা ছোট মানুষ। কোনো ভুল করে থাকলে যেন ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেছ আলী ইছা বলেন, ‘ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করাতো ওদের কাজ না, এটা পৌরসভার কাজ। তারপরও ওরা কেন এটা করেছে? যদিও এ ঘটনার পর ওদের অনেকে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে।’