ব্যাংকে জমা টাকার ১০ শতাংশ ঋণও মেলে না গ্রামে!

৩ দিন আগে
ব্যাংক খাতে জমাকৃত অর্থের ১০ শতাংশ ঋণও বিতরণ করা হয় না গ্রামীণ পর্যায়ে। উল্টো গ্রামীণ আমানত চলে যাচ্ছে বড় বড় ঋণ গ্রহীতা আর খেলাপিদের পকেটে। তদবির আর প্রভাবশালী না হওয়ায় অনেক আবেদনকারীই ঋণ পান না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাংক ঋণের পরিমাণ না বাড়ায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গতি বাড়ছে না। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শহর-গ্রামীণ পর্যায়ে ঋণ প্রদানের রেশিও নির্ধারণের পরামর্শ তাদের।

 

ঢাকার সাভারের ছোট ও মাঝারি ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র ভাকুর্তা ইউনিয়নের চনপাড়া বাজার। কেউ নিজেই বিনিয়োগ করেছেন, কেউ নিয়েছেন ব্যাংক ঋণ। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, আগে ঋণ নিতে মাসের পর মাস ঘুরতে হলেও এখন সেটি সপ্তাহের মধ্যেও মিলছে। তবে যারা বড় ব্যবসায়ী তারা ঋণ ছাড়ে বেশি সুযোগ পান। ছোট ব্যবসায়ীদের মেলে না তেমন কোনো সহায়তা।

 

কয়েক বছর আগেও মফস্বল এলাকার অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যাংকের ঋণ পেতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। যা বছরের ব্যবধানে অনেকটা কমেছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে ব্যাংকগুলোতে জমাকৃত অর্থের বিপরীতে সিংহভাগ ঋণ দেয়া হয় শহরাঞ্চলে।

 

আরও পড়ুন: ফাইলে বন্দি আসবাবপত্র খাতের বন্ড সুবিধা, হতাশ উদ্যোক্তারা

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্চ পর্যন্ত দেয়া প্রতিবেদন বলছে, ব্যাংক খাতে মোট অর্থের মধ্যে সারাদেশ ঋণ প্রদান করা হয়েছে ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে শহরে জমার বিপরীতে ঋণ প্রদান করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা; যা প্রদানকৃত মোট ঋণের ৯২ শতাংশের বেশি। আর শহরের বাইরে গ্রাহকদের অর্থ জমার পরিমাণ ৩ লাখ এক হাজার কোটি, যার বিপরীতে গ্রাহকরা ঋণ পেয়েছেন মোট প্রদানকৃত ঋণের ৮ শতাংশেরও কম।

 

অর্থনীতিবিদদের মতে, উদ্যোক্তার আবেদন থাকলেও অনেককেই ঋণ দেয়া হয় না প্রভাব না থাকার কারণে। ভারসাম্যপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থা না হলে গ্রামীণ পর্যায়ে হবে না কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন।

 

অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দেখেছি, কোনো কোনো বড় প্রতিষ্ঠানের লোনের পরিমাণ তাদের জমাকৃত টাকার চেয়ে ২০০ শতাংশেরও বেশি। গ্রামের সাধারণ মানুষের ডিপোজিটের অর্থই চলে যাচ্ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ঋণে। ফলে দেশের কৃষি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হচ্ছে না। গ্রাম পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের গুরুত্বই দেয়া হয় না। কারণ তারা তদবির করতে পারে না, আবার বড় কোনো প্রভাব বিস্তারও করতে পারে না। এ অবস্থায় ভারসাম্যপূর্ণ ঋণ নীতির অভাবে সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন: বিনিয়োগ সংকট ও বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহারের অভাবে ধুঁকছে স্টার্টআপ

 

২০০৯ থেকে ২৪-এর জুলাই। ১৬ বছরে দুষ্কৃতকারীদের শহরকেন্দ্রিক ঋণ প্রবাহের অনৈতিক সংস্কৃতি থেকে এবার বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে কিছু ব্যাংক।

 

জনতা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে এসএমই খাতে ক্ষুদ্র ঋণ এবং কৃষি খাতে ঋণ সম্প্রসারণ। যাতে অধিক সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এখন থেকে রংপুরের মানুষ যে টাকা ব্যাংকে রাখছে, সেই টাকা রংপুরেই বিনিয়োগ হবে। এতে করে স্থানীয় অর্থনীতি উপকৃত হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে। শুধু রংপুর নয়, প্রতিটি জেলার ক্ষেত্রেই এই নীতি অনুসরণ করা হবে।’

 

ভারসাম্যপূর্ণ ঋণ ব্যবস্থায় সিলিং করে দেয়ার পরামর্শ অর্থনীতিবিদদের। অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে ঋণ ব্যবস্থায় সিলিং করে দেয়া যেতে পারে। অথবা কেন্দ্রীয় ব্যাংক শহর-গ্রামীণ পর্যায়ে ঋণ প্রদানের একটি রেশিও নির্ধারণ করে দিতে পারে।’

 

শহরের বাইরে ব্যাংকগুলো জমাকৃত অর্থের ৮০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট এলাকায় উদ্যোক্তাদের ঋণ হিসেবে প্রদানের পরিবেশ তৈরির পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।

]]>
সম্পূর্ণ পড়ুন